মাত্র ১০টি দিয়ে শুরু করে এখন খামারে প্রায় ২০০ ছোটবড় সাদা ইঁদুর রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে সাদা জাতের ইঁদুর পুষে তাক লাগালেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মো. নাসির উদ্দিন। নাসিরের বাড়ি উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী আবদুল্লাহপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মান্নান মিয়ার ছেলে। স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়েসহ ইঁদুর নিয়েই এখন নাসিরের সময় কাটে বেশি। ইউটিউব দেখে মূলত তিনি ইঁদুরের খামার গড়ে তোলেন। অনেকেই সাদা ইঁদুর দেখতে তাঁর বাড়ি ভিড় করছেন। আবার কেউ দেখতে এসে ইঁদুর কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ইঁদুর পালন করে ইতোমধ্যে নাসির লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন।
তাঁর কাছ থেকে সাদা জাতের ইঁদুর কিনতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ফার্মাসিউটিক্যালসসহ গবেষণা কেন্দ্র থেকে লোকজনও আসছেন। নাসিরের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বসতঘরের পাশে রয়েছে ছোট্ট একটি ঘর। ঘরে বেশ কয়েকটি খাঁচা। খাঁচায় সারিবদ্ধভাবে সাজানো মলাটের বাক্স। বিড়ালসহ মাংসভোজী প্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে দরজা-জানালায় সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে শক্ত জাল। নাসির উদ্দিন বলেন, ‘একসময় জীবিকার প্রয়োজনে ঢাকার একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। ২০১৬ সালে বাড়ি চলে আসি। এ সময় সংসারের হাল ধরতে কৃষিকাজের পাশাপাশি শুরু করি হাঁস-মুরগি ও কবুতর পালন। তবে লাভ বেশি না হওয়ায় বিকল্প উপায় খুঁজতে থাকি। পরে ইউটিউব দেখে ইঁদুর পালনে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। প্রায় পাঁচ মাস আগে ঢাকার কাঁটাবন থেকে সুইজারল্যান্ডের অ্যালবিনো প্রজাতির ১০টি সাদা ইঁদুর কিনে আনি। এতে আমার খরচ হয় ৫ হাজার টাকা। কিছুদিনের মধ্যে একটি ইঁদুর আটটি বাচ্চা দেয়। কয়েকদিনের মধ্যে আরও তিনটি ইঁদুর বাচ্চা দেয়। পর্যায়ক্রমে সব ইঁদুর বাচ্চা দিতে থাকে। বর্তমানে আমার খামারে ছোটবড় ২ শতাধিক ইঁদুর রয়েছে। খাবার হিসেবে গম, ভুট্টা ও ধান দেওয়া হয়। দৈনিক দুই বেলা খাবার দিতে হয়। গড়ে খরচ হয় ৬০ টাকা। ফার্মাসিউটিক্যালসে ও গবেষণার কাজে এ ইঁদুরের চাহিদা অনেক। গবেষণায় ইঁদুরের কঙ্কালও কাজে লাগে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে লোকজন এসে ইঁদুর কিনে নিয়ে যান।’
জানা যায়, অ্যালবিনো জাতের সাদা ইঁদুর ৪০ দিন পরপর ছয় থেকে সাতটি করে বাচ্চা দেয়। বছরে বাচ্চা দেয় ছয় থেকে সাতবার। স্থানীয়রা বলেন, ‘এর আগে সাদা ইঁদুর দেখিনি। মানুষ এখানে গাড়ি নিয়ে আসে ইঁদুর কিনতে। শুনেছি এসব ইঁদুর নাকি গবেষণার কাজে লাগে।’ আবদুল্লাহপুর গ্রামের আমীন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের গ্রামের নাসির কয়েক মাস ধরে সাদা ইঁদুর পালন করছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাসিরই প্রথম সাদা ইঁদুর পালন করছে। ইঁদুর বিক্রি করে সে লাভবানও হয়েছে।’ আখাউড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জুয়েল মজুমদার বলেন, ‘এ জাতের ইঁদুর পালন লাভজনক ব্যবসা। মূলত ফার্মাসিউটিক্যালস, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ইঁদুরের অনেক চাহিদা রয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও এ ইঁদুরের চাহিদা রয়েছে। তা ছাড়া শখের বশেও অনেকে সাদা ইঁদুর লালনপালন করেন। আখাউড়ায় ইঁদুর চাষ হচ্ছে বলে শুনেছি।’