ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় কালমেগি। প্রবল বৃষ্টিপাত ও বন্যায় তলিয়ে গেছে বহু এলাকা, এতে অন্তত ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে কয়েক লাখ মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার ভোর থেকে শুরু হয়ে বুধবার পর্যন্ত তাণ্ডব চালায় এই টাইফুন।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেবু দ্বীপের প্রায় সব শহর প্লাবিত হয়েছে। কর্দমাক্ত বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে গাড়ি, ট্রাক ও বিশাল কনটেইনার পর্যন্ত।
সেবুর বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের উপপ্রশাসক রাফায়েলিতো আলেজান্দ্রো জানান, শুধু সেবুতেই এখন পর্যন্ত ২১ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। পুরো দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮। বেশিরভাগই পানিতে ডুবে মারা গেছেন বলে জানা গেছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, টাইফুনের আগের ২৪ ঘণ্টায় সেবু অঞ্চলে ১৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা মাসিক গড়ের চেয়েও অনেক বেশি।
প্রাদেশিক গভর্নর পামেলা বারিকুয়াত্রো ফেসবুক পোস্টে লেখেন, আমরা ভেবেছিলাম প্রবল বাতাসই বিপদ ডেকে আনবে। কিন্তু প্রকৃত ঝুঁকি এসেছে পানির কারণে—বন্যায় ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে।
সেবু সিটির স্থানীয় কর্মকর্তা এথেল মিনোজা জানান, উদ্ধারকর্মীরা এখনো পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার অভিযানে কাজ করছেন। লেইতে প্রদেশে এক বৃদ্ধ পানিতে ডুবে এবং বোহলে গাছচাপায় একজন মারা গেছেন।
২৮ বছর বয়সি স্থানীয় বাসিন্দা ডন ডেল রোসারিও বলেন, পানি এত দ্রুত উঠছিল যে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। জীবনে এমন ভয়াবহ কিছু দেখিনি।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে টাইফুন আরও তীব্র ও ঘনঘন হচ্ছে। উষ্ণ সমুদ্রপৃষ্ঠের কারণে ঝড় দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করছে এবং ভারি বৃষ্টিপাত ঘটাচ্ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানিয়েছে, সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে আগাম প্রায় ৪ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে উদ্ধার অভিযানে নিয়োজিত একটি সুপার হিউই উড়োজাহাজ উত্তর মিন্দানাও এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান চলছে।
বর্তমানে কালমেগি ভিসায়ান দ্বীপপুঞ্জ অতিক্রম করছে, যেখানে ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে বাতাস এবং দমকা হাওয়ার গতি ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে। এতে বহু এলাকায় গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে।
ফিলিপাইনে প্রতিবছর গড়ে ২০টি টাইফুন আঘাত হানে। এ বছর কালমেগির মধ্য দিয়ে সেই সংখ্যায় পৌঁছেছে দেশটি। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে আরও তিন থেকে পাঁচটি টাইফুন আঘাত হানতে পারে।
গত সেপ্টেম্বরে দেশটিতে দুটি শক্তিশালী ঝড় আঘাত হেনেছিল, যার একটি ছিল সুপার টাইফুন রাগাসা, যা ফিলিপাইন পেরিয়ে তাইওয়ানেও তাণ্ডব চালিয়ে অন্তত ১৪ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়।
বিডি-প্রতিদিন/মাইনুল