নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে জয়ী হয়ে জোহরান মামদানি ইতিহাস গড়েছেন। ৩৪ বছর বয়সী এই ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট নেতা নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম এবং দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র হতে যাচ্ছেন।
মেয়র হিসেবে তিনি বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী শহর প্রশাসনের প্রধান হবেন। যার আওতায় শুধু শহর পরিচালনা নয়, প্রায় একটি ছোট রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব থাকবে।
যার আওতায় থাকবে প্রশাসনিক নির্বাহী ক্ষমতা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, বাজেট ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং গণপরিবহন ও নগর পরিকল্পনা। এর মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রভাবক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন।
জোহরান মামদানি জন্মগ্রহণ করেন উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায়। তার পিতা মাহমুদ মামদানি কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। মামদানির মা মিরা নাইর, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত চলচ্চিত্র পরিচালক। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাজ হলো মুনসুন ওয়েডিং, মিসিসিপি, মাসালা। সাত বছর বয়সে পরিবারসহ তিনি নিউইয়র্কে পাড়ি জমান। মামদানি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন ২০১৮ সালে।
নিউয়র্কের ব্রঙ্কস হাইস্কুল অব সায়েন্স থেকে পড়াশোনা শেষে বোউডয়িন কলেজে আফ্রিকানা স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। কলেজে পড়ার সময় তিনি স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন নামের সংগঠনের ক্যাম্পাস শাখা প্রতিষ্ঠা করেন।
কলেজ শেষ হওয়ার পর তিনি কুইন্সে ফোরক্লোজার প্রিভেনশন কাউন্সেলর হিসেবে কাজ করেন, যেখানে তিনি বাসিন্দাদের উচ্ছেদ রোধে সহায়তা করেন। এই কাজ থেকেই তিনি রাজনীতিতে আগ্রহী হন।
মামদানি তার রাজনৈতিক জীবন ছাড়াও সাংস্কৃতিক ও ব্যক্তিগত জীবনেও বহুমুখী। তিনি একসময় র্যাপার ছিলেন। চলতি বছরের শুরুতে সিরীয়-আমেরিকান শিল্পী রামা ডুওয়াজির সঙ্গে বিয়ে করেছেন।
তাকে বলা হচ্ছে বহুসাংস্কৃতিক পরিচায়ক। যিনি শহরের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্যের বার্তা প্রচার করেছেন।
জোহরান মামদানি তার প্রচারে নিউ ইয়র্ককে আরও সাশ্রয়ী ও নাগরিকমুখী করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন ২ লাখ পাবলিক হাউজিং ইউনিট নির্মাণের। সব শ্রেণির মানুষের সন্তানদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও টিউশনমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নে প্রতিশ্রুতি দেন।
এছাড়া, শহরে বাসসার্ভিস ও মুদি দোকান চালুর প্রস্তাবও দিয়েছেন। যা সাধারণ মানুষ ও ন্যূনতম আয়ের পরিবারের মধ্যে তাকে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তুলেছে।
আগামী ১ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে শহরের সর্বকনিষ্ঠ মেয়র হবেন। এর আগে ১৯১৪ সালে ৩৪ বছর বয়সে নির্বাচিত হন জন পুরয় মিচেল।