দীর্ঘ সাড়ে ১২ ঘণ্টার সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সাত মাস বয়সী সংযুক্ত (কনজয়েন) যমজ শিশু ইয়ারা ও লারাকে আলাদা করেছে সৌদি আরবের একটি বিশেষ সার্জিক্যাল দল। অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন হয় রাজধানী রিয়াদের কিং আবদুল্লাহ স্পেশালিস্ট চিলড্রেন’স হাসপাতালে, যা ন্যাশনাল গার্ডের অধীনে পরিচালিত কিং আবদুল আজিজ মেডিকেল সিটির অংশ। এতে নেতৃত্বে দেন অভিজ্ঞ সার্জন ড. আবদুল্লাহ আল রাবিয়া, যিনি আল রাবিয়া সৌদি কনজয়েন্ড টুইনস প্রোগ্রামের প্রধান ও রাজকীয় উপদেষ্টা। তার নেতৃত্বে অস্ত্রোপচারে অংশ নেন ৩৮ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী, যাদের মধ্যে ছিলেন শিশুরোগ সার্জন, অ্যানেসথেসিয়োলজিস্ট, অর্থোপেডিক ও ইউরোলজির বিশেষজ্ঞরা।
পেটের নিচের অংশ ও পেলভিসে সংযুক্ত ছিল ইয়ারা ও লারা। যৌথভাবে ভাগাভাগি করছিল হজমতন্ত্রের অংশ, মূত্রতন্ত্র, প্রজননতন্ত্র, পেলভিক হাড়ের কিছু অংশ। অস্ত্রোপচারের জটিলতা সত্ত্বেও সবকিছু পরিকল্পনা তা অনুযায়ী সম্পন্ন হয়েছে এবং শিশু দু’জনকেই স্থিতিশীল অবস্থায় অস্ত্রোপচার শেষ করা হয়, জানান ড. রাবিয়া।
এই সফল অস্ত্রোপচারটি ছিল সৌদি কনজয়েন্ড টুইনস প্রোগ্রামের ৬৫তম সফল বিয়োজন। গত ৩৫ বছরে এই প্রোগ্রাম ২৭টি দেশের ১৫০টি ঘটনার মূল্যায়ন করেছে। এটি বিশ্বের অন্যতম অভিজাত ও বিশ্বাসযোগ্য প্রোগ্রাম হিসেবে পরিচিত, যেখানে অত্যন্ত জটিল ও দুর্লভ যমজদের আলাদা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এই অস্ত্রোপচারটি নয়টি সুপরিকল্পিত ধাপে বিভক্ত ছিল, যেখানে ছিল বিস্তৃত প্রাক-অস্ত্রোপচার প্রস্তুতি, সার্জারির সময় সমন্বিত দলগত কাজ এবং জটিল পরবর্তী সেবার পরিকল্পনা। ড. আল রাবিয়া সতর্ক করে বলেন, বিচ্ছিন্নকরণ সফল হলেও সেরে ওঠার পথ এখনও দীর্ঘ।
শিশু দু’জনকে শিশু ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হবে, এরপর শুরু হবে দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন, যার মধ্যে থাকবে ফিজিওথেরাপি, মানসিক সহায়তা ও কাউন্সেলিং।
ইয়ারা ও লারার জন্ম ৫ নভেম্বর ২০২৪ সালে। জন্মের সময় তাদের মোট ওজন ছিল ১০ কেজি এবং দু’জনেরই হাত-পা পরিপূর্ণভাবে গঠিত ছিল। কয়েক মাস ধরে চলে বিভিন্ন ইমেজিং, মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ পরামর্শ।
অবশেষে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেন, বিচ্ছিন্নকরণ সম্ভব ও শিশুদের স্বার্থে এটি জরুরি। এই সফল অস্ত্রোপচার কেবল চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন নয়, বরং মানবতা, দলগত প্রচেষ্টা এবং সৌদি আরবের চিকিৎসা সক্ষমতার একটি দৃষ্টান্ত। সূত্র: গালফ নিউজ
বিডি প্রতিদিন/একেএ