দক্ষিণ কোরিয়ায় কুকুরের মাংস খামার বন্ধের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সম্প্রতি দেশটির সরকার জানিয়েছে, ২০২৭ সালের মধ্যে এই বাণিজ্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হবে। দক্ষিণ কোরিয়ার কৃষি, খাদ্য ও গ্রামীণবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, এরই মধ্যে ৪০ শতাংশ কুকুরের মাংস খামার স্বেচ্ছায় বন্ধ হয়ে গেছে।
টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় সংসদ কুকুর প্রজনন, জবাই ও বিতরণ সংক্রান্ত বিশেষ আইন পাস করে। এরপর গত আগস্ট থেকে সরকার কুকুরের মাংস ব্যবসায়ীদের খামার বন্ধে উৎসাহিত করতে শুরু করে।
সরকারি তথ্যমতে, দক্ষিণ কোরিয়ায় মোট ১ হাজার ৫৩৭টি নিবন্ধিত কুকুরের মাংস খামারের মধ্যে ৬২৩টি ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্ধ হয়েছে ছোট খামার (৩০০ বা তার কম কুকুর রাখা হতো), যার সংখ্যা ৪৪৯টি। মাঝারি খামার (৩০০ থেকে ১,০০০ কুকুর) বন্ধ হয়েছে ১৫৩টি, আর বড় খামার (১,০০০-এর বেশি কুকুর) বন্ধ হয়েছে ২১টি।
সরকার আশা করছে, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ আরও ৯৩৮টি খামার বন্ধ হয়ে যাবে, যা মোট খামারের প্রায় ৬০ শতাংশ।
২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে পুরোপুরি কুকুরের মাংস-বাণিজ্য নিষিদ্ধ করতে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যবসায়ীদের স্বেচ্ছায় খামার বন্ধ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে, সহজ গাইডলাইন, নতুন ব্যবসা শুরুতে পরামর্শ এবং আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, যারা এখনো ব্যবসা বন্ধ করেনি, তাদের ওপর নিয়মিত নজরদারি করবে সরকার। তারা কতগুলো কুকুর পালন করছে, খামারের আকার পরিবর্তন হয়েছে কি না, এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হবে। একইসঙ্গে সম্ভাব্য সরকারি সহায়তার তথ্য তাদের জানিয়ে দেওয়া হবে, যাতে তারা দ্রুততম সময়ে খামার বন্ধে রাজি হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার কৃষি মন্ত্রণালয়ের পশুকল্যাণ ও পরিবেশ নীতি ব্যুরোর প্রধান পার্ক জুং-হুন বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো ২০২৭ সালের মধ্যে কোরিয়ার প্রতিটি কুকুরের মাংস খামার বন্ধ করা বা অন্য ব্যবসায় রূপান্তর করা। আমরা চাই ব্যবসায়ীরা সহযোগিতা করুক, যাতে দক্ষিণ কোরিয়া উন্নত পশুকল্যাণ নীতির দেশ হয়ে উঠতে পারে।’
বন্ধ হওয়া খামারগুলোর কুকুরগুলোর দেখভালের দায়িত্ব নেবে স্থানীয় প্রাণী আশ্রয়কেন্দ্র। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে যদি পর্যাপ্ত জায়গা না থাকে, তাহলে সরকারের তত্ত্বাবধানে খামারেই অস্থায়ীভাবে কুকুরগুলো রাখা হবে।
যারা নির্ধারিত সময়ের আগেই খামার বন্ধ করছে, তাদের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করেছে সরকার। প্রতি কুকুরের জন্য ২ লাখ ২৫ হাজার থেকে ৬ লাখ ওন (প্রায় ১৫৪ থেকে ৪১০ মার্কিন ডলার) পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় কুকুরের মাংস খাওয়ার প্রবণতা দিন দিন কমছে। যদিও পূর্ববর্তী প্রশাসন আইন পাস করে কুকুরের মাংস নিষিদ্ধের চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সেটি সফল হয়নি। কারণ, এটি নিষিদ্ধ করলে বহু মানুষের জীবিকা সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা ছিল।
তবে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল ও তাঁর স্ত্রী কিম কিয়ন হির সমর্থনে, বর্তমান প্রশাসন কুকুরের মাংস-বাণিজ্য নিষিদ্ধকরণের উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৭ সালের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় কুকুরের মাংস-বাণিজ্য পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।
সূত্র: টাইমস, এএফপি
বিডি প্রতিদিন/আশিক
