বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার আবারও বাড়ছে। মূল্যস্ফীতির চাপ, কর্মসংস্থানের সংকট আর স্থবির বিনিয়োগ মিলিয়ে নতুন করে সংকটে পড়েছে নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠী। বিশ্বব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে দেশের দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ২ শতাংশ, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। এ সময়ে শ্রমশক্তির হার ৬০ দশমিক ৯ থেকে কমে ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশে নেমেছে। ফলে গত এক বছরে প্রায় ৩০ লাখ কর্মক্ষম মানুষ শ্রমবাজারের বাইরে চলে গেছে, এর মধ্যে ২৪ লাখই নারী। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কর্মসংস্থান না বাড়লে প্রবৃদ্ধি কাগজে থাকলেও বাস্তবে তা মানুষের জীবনে কোনো প্রভাব ফেলবে না। মুদ্রাস্ফীতি ও কর্মসংস্থানের ফাঁদ থেকে মুক্তি দিতে না পারলে, দারিদ্র্য বৃদ্ধির সূচক আরও বাড়বে। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী- সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ, যা আগস্টের তুলনায় কিছুটা বেশি। কিন্তু বাস্তবে বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও আয় কমে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাপন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড)-এর চেয়ারম্যান ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মূল্যবৃদ্ধি এখন নগর দরিদ্রদের জীবনে সবচেয়ে বড় বোঝা। দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষের কাজ পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। আয় না বাড়ায় ঋণের বোঝা বাড়ছে। সরকারকে এখনই নগর দরিদ্রদের জন্য নতুন নীতি নিতে হবে। তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতি ও কর্মসংস্থানের ফাঁদ থেকে মুক্তি দিতে না পারলে, দারিদ্র্র্য বৃদ্ধির সূচক আরও বাড়বে। কারণ গ্রামীণ দরিদ্ররা যেমন সহায়তার দাবিদার, নগরের মানুষও এখন সেই জায়গায় চলে এসেছে। কারণ প্রতিদিনই মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। অথচ সরকারের নজর এখনো পুরোপুরি গ্রামে আটকে আছে।
গবেষণা বলছে, শহরের দরিদ্ররা সরকারি সুরক্ষা কর্মসূচির মাত্র পাঁচ ভাগের এক ভাগ সুবিধা পান। অতিদরিদ্রদের মধ্যে এই বঞ্চনা আরও গভীর। গ্রামের প্রায় অর্ধেক অতিদরিদ্র পরিবার কোনো ভাতা পায় না, আর শহরে এই হার ৬৪ শতাংশ। বাংলাদেশের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সূচনালগ্ন থেকেই তা গ্রামীণ দরিদ্রদের ওপর কেন্দ্রীভূত ছিল। বিধবা, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের ভাতা কিংবা শিক্ষাবৃত্তির ৮০ শতাংশের বেশি গ্রামীণ পরিবারের কাছে যায়। শহরের দরিদ্রদের জন্য আলাদা ২৩টি প্রকল্প মিলিয়ে বরাদ্দের অংশ মাত্র ৪ শতাংশ। র্যাপিডের গবেষণায় দেখা যায়, বস্তিতে গাদাগাদি করে থাকা মানুষ বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত। শিশুদের বড় অংশ স্কুলে যেতে পারে না। অল্প বয়সেই শ্রমে যুক্ত হতে হয়, ফলে দারিদ্র্যের চক্র ভাঙার সুযোগ হারায়। এ পরিস্থিতি বদলাতে হলে বাজেটের অগ্রাধিকার পুনর্গঠন জরুরি। একই সঙ্গে তথ্যভিত্তিক মনিটরিং ও দুর্নীতি রোধ না হলে সামাজিক সুরক্ষার সুবিধা কখনো প্রকৃত প্রাপকের কাছে পৌঁছাবে না।