ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (জাকসু) নির্বাচন শেষ হওয়ার পর এখন সবার দৃষ্টি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ (রাকসু) এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) দিকে। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর রাকসু ও ১২ অক্টোবর চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
রাকসু নির্বাচনে গতকাল তিনজন সিনেট সদস্য প্রার্থীসহ ১৪ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপ্রত্র প্রত্যাহার করে নেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রকাশসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে ছাত্রদলের প্যানেল এবং ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র ফেডারেশনের সমন্বিত প্যানেল রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হচ্ছে আজ রবিবার। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে। গতকাল বিকালে এ তথ্য জানান চাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন।
সূত্র জানায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুল হাসান মিঠুসহ ১৪ জন পদপ্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ভিপি পদে দুজন, জিএস পদে একজন, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে একজন, বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে একজন, ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক পদে একজন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে একজন, সহক্রীড়া সম্পাদক পদে একজন, সহমিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে একজনসহ পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে একজন ও কার্যনির্বাহী সদস্য পদে একজন। এ ছাড়া সিনেট সদস্য পদের তিনজন। এর আগে কেন্দ্রীয় সংসদে ভিপি পদে ১৯ জন, জিএস পদে ১৪ জন, এজিএস পদে ১৬ জন, ক্রীড়া ও খেলাধুলা বিষয়ক সম্পাদক পদে নয়জন, সহকারী ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক পদে ছয়জন, বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে সাতজন, সহকারী বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে আটজন, মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১০ জন, সহকারী মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১০ জন, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, সহকারী সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক পদে নয়জন, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে ১২ জন, সহকারী পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে ১৭ জন, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পদে সাতজন, সহকারী মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে আটজন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে ১০ জন, সহকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে ছয়জন, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক পদে ১৩ জন, সহকারী তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে আটজন এবং কার্যনির্বাহী সদস্যের চারটি পদে ৫৫ জন মনোনয়ন জমা দেন।
এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভিপি পদে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মিঠু জানান, তিনি দলকে সমর্থন দিয়ে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। আসন্ন নির্বাচনে দলের প্যানেলের হয়েই কাজ করবেন।
প্যানেলের নেতারা বলেন, আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সন্দিহান। এখন পর্যন্ত ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়নি। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে উঠলেও কমিশন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বিভিন্ন কাজে কমিশনের দুর্বলতা এ সন্দেহের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে অবিলম্বে ১১ দফা বাস্তবায়ন চান তারা। তাদের দাবিগুলো হলো : স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের ব্যবস্থা করা, ভোট গ্রহণের শুরুতে সাংবাদিক ও প্রার্থীর এজেন্টদের সামনে ব্যালট বাক্স উন্মোচন করা, ভোটারদের আঙুলে মুছে না যায় এমন কালি ব্যবহার করা; এক দিনের মধ্যে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা; ভোট গণনার স্বচ্ছতার জন্য ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট গণনা করতে হবে; প্রার্থীদের নির্বাচনি খরচ নির্দিষ্ট করা; সব প্যানেল বা প্রার্থীর পোস্টারের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা; নির্বাচনি ব্যালট ছাপানো, বাঁধানো, নাম্বারিং করা পর্যন্ত এজেন্টের উপস্থিতি নিশ্চিত করা; পর্যাপ্ত সংখ্যক বুথের ব্যবস্থা করা; ডিজিটাল বোর্ডে ভোটার নম্বরসহ প্রকাশনা চলমান রাখা, সাইবার বোলিং সেল কার্যকর ও কার্যক্রম পদ্ধতির রূপরেখা দেওয়া এবং নির্বাচনের দিন ভোটারদের হাতে ব্যালট লিস্ট ধরিয়ে না দেওয়া।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এফ নজরুল ইসলাম বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। দ্রুতই ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এদিকে আজ রবিবার সকাল ৯টায় চাকসু নির্বাচন কমিশনের অফিসে মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। এর পরদিন থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ ও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, তিন দিন মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে হল সংসদের মনোনয়নপত্রের ফি নির্ধারণ করেছি ২০০ টাকা এবং কেন্দ্রীয় সংসদের ফি নির্ধারণ করেছি ৩০০ টাকা। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার সময় প্রার্থীকে ডোপ টেস্ট করার জন্য একটি কার্ড দেওয়া হবে। পরে প্রার্থী কার্ডটি নিয়ে ৩৫০ টাকা ফি জমা দিয়ে চবি মেডিকেলে ডোপ টেস্টের নমুনা দিয়ে আসবেন।
নির্বাচনের আয়োজন সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী। চাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের অনেকের দলীয় পরিচয় থাকতে পারে। তবে শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে আমরা নির্বাচন পরিচালনা করব। আমরা শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় স্বচ্ছ চাকসু নির্বাচন উপহার দেব।
গত ২৮ আগস্ট ঘোষিত হয় চাকসু নির্বানের তফসিল। সে অনুযায়ী আগামী ২১ সেপ্টেম্বর নির্বাচনি প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে। এর তিন দিন পর ২৫ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার কথা। বহুল আকাঙ্ক্ষিত চাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে আগামী ১২ অক্টোবর। ওই দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ।