সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর জরিপ অনুযায়ী, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা গঠনের পক্ষে ৮৩ শতাংশ মানুষ একমত হয়েছে। এ ছাড়া একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না, এর পক্ষে আছে ৮৯ শতাংশ মানুষ। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি পরিবর্তনের পক্ষে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছে বলে জানিয়েছে সুজন। অন্যদিকে উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে আসন বণ্টন চায় ৭১ শতাংশ মানুষ। ‘না’ ভোটের বিধান চায় ৮৩ শতাংশ। শেষ তিন নির্বাচনের অনিয়মের তদন্ত চায় ৭৯ শতাংশ মানুষ। স্থায়ী স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন চায় ৯০ শতাংশ মানুষ। সুজন প্রস্তাবিত জাতীয় সনদ চূড়ান্তকরণে জনমত যাচাইয়ে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে জনমত যাচাইয়ের তথ্য তুলে ধরা হয়। সম্মেলনে তথ্য উপস্থাপন করেন সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন। তিনি বলেন, গত মে থেকে জুলাই মাসে পরিচালিত হয়েছে জনমত জরিপ। এতে দেশের সবগুলো জেলার মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে। জরিপে অংশ নিয়েছেন ১ হাজার ৩৭৩ জন। এর মধ্যে নারী ৩৩৫ জন, পুরুষ ১ হাজার ৩৩ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের রয়েছেন ৫ জন। নাগরিক সংলাপ হয়েছে ১৫টি। জরিপে অংশ নেওয়া সবাইকে ৪০টি প্রশ্ন করা হয় বলে জানিয়েছেন একরাম হোসেন।
সম্মেলনে জনমত যাচাইয়ে উঠে আসা তথ্যের বরাতে বলা হয়, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি পরিবর্তনের পক্ষে ৯০ শতাংশ মানুষ মত দেওয়ার চিত্র উঠে এসেছে জরিপে। বর্তমান বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’ রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম জালিয়াতির তদন্ত চায় ৭৯ শতাংশ মানুষ।
সুজনের জরিপে অংশ নেওয়া ৬৯ শতাংশ মানুষ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে মত দিয়েছে, ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নিম্নকক্ষে নারী আসন চায় ৬৩ শতাংশ, উচ্চকক্ষে নারীদের জন্য ৩০টি সংরক্ষিত আসনের পক্ষে ৬৯ শতাংশ মানুষ একমত হয়েছে।
সুজনের সদস্য একরাম হোসেন বলেন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে ১০০ আসনের জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে ৭১ শতাংশ। জাতীয় সংসদে বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ চায় ৮৬ শতাংশ, বিরোধী দল থেকে উচ্চকক্ষের ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ চায় ৮২ শতাংশ, একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয়প্রধান না হতে পারার বিধান চায় ৮৭ শতাংশ মানুষ। একই ব্যক্তির সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে না থাকার বিধান চায় ৮৯ শতাংশ, মন্ত্রিপরিষদশাসিত সরকারের পক্ষে ৮৭ শতাংশ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি চায় ৮৮ শতাংশ, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন চায় ৮৭ শতাংশ, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছে ৯০ শতাংশ মানুষ।
সুজনের জরিপ অনুযায়ী, খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের সঙ্গে ইন্টারনেট সেবাকেও মৌলিক অধিকার হিসেবে চায় ৮৮ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়া জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল চায় ৮০ শতাংশ মানুষ। দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন ও প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার কমিশনকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি চায় ৯০ শতাংশ মানুষ।
নির্বাচনকালে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে নির্বাহী বিভাগের এমন কার্যক্রম গ্রহণে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নেওয়ার বিধান চায় ৮৭ শতাংশ, প্রত্যেক জনশুমারির পর বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি স্বাধীন সীমানা নির্ধারণ কর্তৃপক্ষ গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে ৮৪ শতাংশ।
নির্বাচনি ব্যয় নিয়ে অসত্য তথ্য প্রদানকারীর প্রার্থিতা বা ফলাফল বাতিল চায় ৮৮ শতাংশ মানুষ। চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিগ্রস্ত ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের রাজনৈতিক দলে অযোগ্য হিসেবে দেখতে চায় ৯২ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়া পাসপোর্টের তথ্য ব্যবহার করে প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালট বা অনলাইনে ভোট চায় ৮৭ শতাংশ মানুষ। জাতীয় ভোট নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে ৮৮ শতাংশ। ‘না’ ভোটের বিধান চায় ৮৩ শতাংশ। স্থায়ী স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন চায় ৯০ শতাংশ মানুষ।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচিত সরকার কীভাবে সংস্কারকাজ বাস্তবায়ন করবে তার একটি চিত্র ২০১৩ সালে তুলে ধরেছিলাম। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগেও আমরা সারা দেশের একটা জনমত জরিপ করেছিলাম। এবারও জনগণ মতামত দিয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও মতামত নিয়েছি। যারা সরকারে যাবে তারা প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করবে। সে হিসাবে জাতীয় সনদের একটা খসড়া আমরা ঐকমত্য কমিশনে জমা দিয়েছি।’ জনমত সৃষ্টি করাই এ কাজের উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন বদিউল আলম মজুমদার। সরকার যে জুলাই সনদ তৈরি করছে এটাকে সহযোগিতা করা এবং জনমত সৃষ্টি করা। বর্তমান সরকার দল নিরপেক্ষ কি না, প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এই সরকার কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব করে না। এই সরকার নির্দলীয় সরকার।