জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, আমাদের দলের নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা আমরা ফিরে পাব। আদালত রায় দিয়েছেন এ বিষয়ে। নির্বাচন কমিশনও পজিটিভ।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলকভাবে দেওয়া তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভার প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত কোনোভাবে মানার সুযোগ নেই। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পর নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পেতে এ বৈঠক হয়। সিইসি ছাড়াও বৈঠকে অংশ নেন নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ও ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য জসিম উদ্দিন সরকার এবং আইনজীবী শিশির মনির। গতকাল দলের নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পেতে আপিল বিভাগের রায়ের অনুলিপি নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে এক যুগ আগে হাই কোর্টের দেওয়া রায় রবিবার বাতিল করেন আপিল বিভাগ। সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখন নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীকের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। বৈঠক শেষে এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘আদেশের মধ্যে বলা হয়েছে আগের অবস্থায় ফিরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। যেমন আমি ২০০৮ সালে নির্বাচন করেছি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। তখন নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলাম, আমি তো দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছি। তাহলে আজ পর্যন্ত হাই কোর্ট যে অন্যায় আদেশটা দিয়েছিলেন, সে আদেশটা বাতিল হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। সেখানে তো প্রতীকসহ ছিল। সুতরাং যেখানে আদালতের আদেশ, সেখানে ওনাদের (ইসি) তো না দেওয়ার কিছু নেই। ওনারা (ইসি) বলেনওনি, বলার সুযোগও নেই। আদালতের বিরুদ্ধে কীভাবে বলবেন?’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু ২০১৩ সালে হাই কোর্ট অর্ডার করার আগে প্রতীক (দাঁড়িপাল্লা) তালিকায় ছিল আমাদের দলের নিবন্ধনও ছিল, সেহেতু আগের অবস্থায় আসা মানে এটা অটোমেটিক তালিকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। বাকিটা হলো অফিশিয়াল। এখন কমিশন পজিটিভ বলেছেন। আমরা দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ফিরে পাব। দলের নিবন্ধনও ফিরে পাব।’ ২০১৩ সালের ১ আগস্ট সংবিধানের সঙ্গে গঠনতন্ত্র ‘সাংঘর্ষিক’ হওয়ার কারণ দেখিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ‘দাঁড়িপাল্লা’ ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের মনোগ্রামে ব্যবহৃত হবে এবং কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও দলের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। ওই সিদ্ধান্ত ইসি সচিবালয়ে পাঠানোর পর নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা থেকে জামায়াতের জন্য বরাদ্দ প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নির্বাচনি প্রতীকের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ২০১৭ সালের ৮ মার্চ গেজেট জারি করে ইসি। ফুলকোর্ট সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘২০১৬ সালের সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক অর্ডার মানার কোনো সুযোগ নেই। সুপ্রিম কোর্ট ফুলকোর্ট সভা কোনো আদালত নয়। এটা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বডি ফাংশান করে। বিবিধ এজেন্ডা দিয়ে ভোজসভার মধ্যে আপনি মেলাফাইড ইনটেনশন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা সামনে রেখে করবেন, সেই আমলে। এবারের মুক্ত পরিবেশে সেরকম চিন্তা করার সুযোগ আছে? ইনশাল্লাহ আমরা দাঁড়িপাল্লা ফিরে পাব, এটা আদালত বলেছেন। কমিশনও পজিটিভ।’