পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের চিন্তার কোনো কারণ নেই। কারণ এ রাজ্যে নতুন ওয়াক্ফ আইন চলতে দেওয়া হবে না। মুসলমানদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দিদি (মানে মমতা) আপনাদের পাশে আছে দিদি আপনাদের সম্পত্তি রক্ষা করবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের কোনোরকম প্ররোচনায় পা না দেওয়ারও পরামর্শ দেন মমতা।
গতকাল কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে জৈন ধর্মের তরফে ‘বিশ্ব নবকার মহামন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে মুখ্যমন্ত্রী এসব বলেন। গত সপ্তাহেই ভারতের সংসদে পাস হয় ‘ওয়াকফ সংশোধনী বিল-২০২৫’। এরপর মঙ্গলবার তা আইনে পরিণত হয়। আর সেই আইনের বিরোধিতা করে ইতোমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ, বিক্ষোভ চলছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের আমি একটা কথা বলব, ওয়াকফ সম্পত্তি আপনাদের মনে খুব কষ্ট হয়েছে কিন্তু আপনারা ভরসা রাখুন, পশ্চিমবঙ্গে এমন কিছু হবে না। এখানে ডিভাইড অ্যান্ড রুল নীতি হবে না।’ সংখ্যালঘুদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, ‘আমরা যেমন অন্য কারও সম্পত্তি কেড়ে নিতে পারি না, ঠিক অন্যদেরও আমাদের সম্পত্তি কারার অধিকার নেই। আপনারা এই বার্তাটা দিন যে আপনারা বাঁচুন এবং অন্যকেও বাঁচতে দিন। এতে ভেঙে পড়ার কিছু নেই।’ যে সময় সংসদে এই ‘ওয়াকফ সংশোধনী বিল-২০২৫’ আনা হলো এবং নতুন ওয়াকফ আইন লাগু হলো- সেই সময় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মমতা ব্যানার্জি, সেই সঙ্গে প্রতিবেশী দেশের প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা প্রতিবেশী বাংলাদেশের অবস্থা দেখুন! এখন এই জিনিসটা (ওয়াকফ সংশোধনী বিল) করার কোনো দরকার ছিল না। এই ধরনের জিনিস করলে কখনো কখনো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এটা আমাদের জন্য সমস্যা কারণ আমাদের এখানে ৩৩ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ আছে। আমরা কী করব? তাদেরকে (৩৩ শতাংশ) বের করে দেব? কীভাবে তাদের বের করে দেব? এটা তো আজ থেকে নয়, স্বাধীনতার সময় থেকেই এরা বসবাস করছে। দেশভাগের আগে ভারত-বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান একসঙ্গে ছিল। পরে তা বিভক্ত হয়ে যায়। কিন্তু ওই বিভাজন আমরা করিনি, আমাদের আগে যারা (রাজনৈতিক নেতারা) ছিলেন তারা করেছে। ওদের অনেক পরে আমরা জন্মগ্রহণ করেছি ফলে, আমরা কেন সেই ভুলের দায় নেব?’ মমতার সতর্কবার্তা ‘যারা আমাদের এখানে আছে তাদেরকে সুরক্ষা দেওয়া আমাদের কাজ। যদি কেউ আপনাদেরকে প্ররোচিত করার চেষ্টা করে, আপনারা সেই প্ররোচনায় পা দেবেন না। সেক্ষেত্রে আপনাদের একত্রিত হওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া একটা কথা মনে রাখবেন যে দিদি যতদিন আছে, দিদি আপনাদের খেয়াল রাখবে এবং আপনাদের সম্পত্তি রক্ষা করবে। আপনারা একে অপরের ওপর থেকে বিশ্বাস হারাবেন না। আমরা যদি এক থাকি তবে আমরা সবকিছু জয় করতে পারি। এমনকি গোটা বিশ্বকে জয় করতে পারি।’ মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য বিভেদ নয়, সংযোগ রক্ষা করা আমাদের উদ্দেশ্য। বিভেদ করলে দেশ ভেঙে যাবে, কমজোরি হয়ে যাবে, অর্থনীতি ভঙ্গুর হয়ে যাবে। আর একত্রিত হয়ে থাকলে দেশ সামনের দিকে অগ্রসর হবে।’