‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই
কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই
আজ আর নেই...।’ ১৯৮৩ সালে মুক্তি পায় এই কালজয়ী গানটি। মুক্তির পর থেকে আজও গানটি শুধু শ্রোতাপ্রিয় নয়, এককথায় অমর হয়ে আছে। ২০০৬ সালে বিবিসি জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের তালিকায় এ গানটি চতুর্থ অবস্থান দখল করে নিয়েছে। গানটি এতই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে শ্রোতারা এর স্মৃতি খুঁজে পেতে চলে আসে কলকাতার সেই কফি হাউসে, যেখানে গানের পটভূমি অনুযায়ী মান্না দে তার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
তবে মান্না দে এ গানটির দ্বিতীয় অংশ হিসেবে ‘স্বপ্নের কফি হাউস’ শীর্ষক একটি গান প্রথম গানটির ঠিক কুড়ি বছর বাদে গেয়েছিলেন। কিন্তু রহস্যময় কারণে সেটি শোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বাঙালি। গুগলে কফি হাউসের সেই আড্ডাটা গানটির ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, গীতিকার গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের কথায় সুর দিয়েছিলেন নচিকেতার পুত্র সুপর্ণকান্তি ঘোষ। মান্না দের মতে, গৌরীবাবু লিখেছিলেন দুর্দান্ত। সুরকার সুপর্ণকান্তি অসাধারণ কাজ করেছিলেন।
এ গানটির জন্ম কাহিনিটি বেশ গল্পের মতো। সময়টা ১৯৮৩ সাল। একদিন নচিকেতা ঘোষের নিউ আলিপুরের বাড়িতে গিয়েছিলেন গীতিকার গৌরী প্রসন্ন। উদ্দেশ্য ছিল শক্তি ঠাকুরকে দিয়ে একটি গান তোলা। বাড়িতে আসার অনেকক্ষণ পর সুপর্ণকান্তিকে দেখতে পেয়ে গৌরী প্রসন্ন মজা করেই বলেন, এ কী বাইরে আড্ডা মেরে সময় কাটাচ্ছ? এর উত্তরে সুপর্ণকান্তি তার গৌরী কাকাকে বলেন, সব গদগদে প্রেমের গান লিখছ। একটা অন্যরকম গান লিখে দেখাও না। এই আড্ডা নিয়েও তো গান লিখতে পারো। এবার গৌরী প্রসন্ন বলেন, তুমি তো অক্সফোর্ডের এম এ হয়ে গিয়েছো। আড্ডা নিয়ে বাংলা গান গাইবে? সুপর্ণ এবার বলে, কেন নয়। কফি হাউসের আড্ডা নিয়েও তো একটা গান লিখতে পারো। গৌরী প্রসন্ন এবার বলেন, তোমার বাবা (নচিকেতা ঘোষ) কি আর সে গান গাইবেন? তর্ক চলছে বটে কিন্তু গৌরী প্রসন্ন এরই মধ্যে মনে মনে তৈরি করে ফেলেন দুটি লাইন। এরপরই সুপর্ণকান্তিকে বললেন, লিখে নাও- ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই/ কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই।’ সুপর্ণও সঙ্গে সঙ্গে দুটো লাইনেই সুর দিয়ে শুনিয়ে দেন। উপস্থিত শক্তি ঠাকুর সেবার পূজায় গানটা গাওয়ার জন্য অনুরোধ জানালেও সুপর্ণ রাজি হননি। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই ঠিক করে নিয়েছিলেন মান্না দের কথা। তারপর সুপর্ণকান্তির সুরে মুম্বাইয়ে গানটি রেকর্ড করেন মান্না দে। তৈরি হয়ে যায় একটা ইতিহাস।