কাগজে-কলমে প্রথম শ্রেণি হলেও বগুড়া পৌরসভা এলাকার অধিকাংশ সড়ক খানাখন্দে ভরা। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় সড়কের বেহাল দশা। এছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় মূল সড়কে একটু বৃষ্টিতে হাঁটু পানি জমে। ফলে পৌর এলাকার জনদুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এলাকাবাসীরা বলছেন, জনপ্রতিনিধি না থাকায় কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত নগরবাসী।
এদিকে, সাবেক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, রাজনৈতিক দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যাবে না। তাই যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই সহজে এ সকল সমস্যা সমাধান করতে পারবেন।
জানা গেছে, দেশের প্রাচীন ও বৃহৎ বগুড়া পৌরসভা। আয়তনের সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি নাগরিক সুবিধা। প্রায় ৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনে এই পৌরসভা কাগজে কলমে প্রথম শ্রেণির হলেও উন্নয়ন নেই বললেই চলে। পৌরসভায় এক হাজার ৩৪৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে অধিকাংশই এখন ক্ষত-বিক্ষত। ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বগুড়া পৌরসভার আয়তন ১৪ বর্গকিলোমিটার থেকে পাঁচগুণ বাড়িয়ে ৭০ বর্গকিলোমিটার করা হয় ২০০৬ সালে। ১২টি ওয়ার্ড থেকে বাড়িয়ে ২১টি ওয়ার্ড করা হয়। সাড়ে সাত লাখ নাগরিকের মধ্যে প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ বসবাস করেন মূল শহরে ১ থেকে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে। বর্ধিত ১৩ থেকে ২১ নম্বর ওয়ার্ডে বাস করেন বাকি তিন লাখ। পৌরসভায় ১ হাজার ৩৪৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে মাত্র ৭২৯ কিলোমিটার পাকা। বাকি ৬১৯ কিলোমিটারের মধ্যে ৩৫০ কিলোমিটার পুরোপুরি কাঁচা। আরসিসি ঢালাই ও ইট বিছিয়ে ২৬৯ কিলোমিটার সড়ক চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, কাঁচা ও ইট বিছানো সব সড়কই বর্ধিত এলাকার মধ্যে। পৌরসভার মোট সড়কের ২১ শতাংশ এখনো কাঁচা। ৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পৌরসভার ৫৬ বর্গকিলোমিটার বর্ধিত এলাকায় নেই নালার ব্যবস্থা।
বগুড়া শহরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কৈগাড়ী এলাকার বসুন্ধারা সড়ক, নারুরী দক্ষিণ পাড়া, দক্ষিণ ধাওয়াপাড়াসহ ওই এলাকার প্রায় সড়কই খানা-খন্দে ভরা। বিশেষ করে বসুন্ধরা সড়কটির বেহাল দশা। এই সড়কে ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। একটু বৃষ্টি হলে হাঁটু পানি জমে যায়। ফলে ওই এলাকায় বসবাসরত মানুষের কষ্টে চলাফেরা করতে হয়। এই ওয়ার্ডের দক্ষিণধাওয়া পাড়া থেকে কাজির মোড় ও নাপিতপাড়া পর্যন্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো নেই। এছাড়া অন্যান্য সড়ক ও ড্রেন সংস্কার না করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শহরের গোহাইল রোড, টিনপট্টি, দত্তবাড়ী, উত্তর চেলোপাড়া, সেউজগাড়ী, হাড্ডিপট্টি থেকে বাদুরতলা সড়ক, জহরুলনগর, কামারগাড়ি-হাড্ডিপট্টিসহ শহরের ছোট-বড় সড়কগুলো সড়ক এখন খানা-খন্দে ভরা। সড়কের পাশের ড্রেনও নষ্ট হয়ে পড়েছে। এসব পথ দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। পথচারীরা যানবাহনে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাজু জানান, এই ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়কের বেহাল দশা। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় অনেক রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে সামান্য বৃষ্টিতে ড্রেন উপচে পানি জমে সড়কে। এতে দুর্ভোগে ওয়ার্ডবাসী ও চলাচলকারী জনসাধারণ। ভাঙা রাস্তায় যান চলাচলেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই দ্রুত সড়ক এবং ড্রেন সংস্কার করা জরুরি।
২০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রোস্তম আলী বলেন, ওয়ার্ডগুলোতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি না থাকায় কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসী। নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকলে সড়ক ও ড্রেন সংস্কার, এলাকার উন্নয়ন এবং জনদুর্ভোগসহ সকল সমস্যা সহজে সমাধান করতে পারবেন। এতে করে যেমন পৌরবাসী উপকৃত হবেন তেমনি উন্নয়ন দ্রুত এগিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর কাউন্সিলরদে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রতিটি ওয়ার্ডে উন্নয়মূলক কাজ থমকে গেছে। তাই দ্রুত জাতীয় নির্বাচন শেষ করে পৌর নির্বাচন দিতে হবে। সেই নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে এলাকার সকল সমস্যা সমাধান হবে।
এদিকে, অর্থ সংকটের অজুহাতে পৌর কর্তৃপক্ষও উদ্যোগ নেয়নি। তারা বলছেন, বর্ধিত এলাকার ২১ শতাংশ সড়ক পাকাকরণ, বাতি সংযোজন ও নালা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য এক হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। সরকারি অনুদান ছাড়া ব্যয় বহন সম্ভব নয়। পৌরসভা সিটি করপোরেশন করার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু ঘোষণার অপেক্ষায়। সিটি করপোরেশন হবে, এমন আশায় এবার বাজেটও ঘোষণা করা হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। গত বছর ২৭১ কোটি টাকার বাজেট থাকলেও এবার ঘোষণা করা হয়েছে ৪০২ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
বগুড়া পৌরসভার প্রশাসক মাসুম আলী বেগ বলেন, বগুড়া পৌরসভাকে দ্রুত সিটি করপোরেশনের ঘোষণা আসবে। তখন বর্ধিত এলাকার উন্নয়ন সমানভাবে হবে। সিটি করপোরেশন হবে এমন আশায় এবার আগের চেয়ে বেশি বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এই বাজেটের মাধ্যমে বগুড়া পৌরবাসীর সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব।
বিডি প্রতিদিন/এমআই