জীবিকার সন্ধানে ২০২৪ সালে দালালের খপ্পরে লিবিয়ায় পাড়ি জমান কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জয়নাবাদ চরপাড়া গ্রামের যুবক পলাশ ইসলাম (৩৫)। কিন্তু সেখানে জীবিকার সন্ধানে গিয়ে উল্টো পড়েছেন জীবন সংকটে। তাকে নির্মম নির্যাতনের ভিডিও-অডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে।
মুক্তিপণের টাকার দাবিতে প্রায় দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হচ্ছে। ভয়াবহ সেসব নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হচ্ছে স্বজনদের কাছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ফেনী থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলায়মান শেখ বলেন, ওই মামলায় গ্রেফতারকৃতদের ফেনী থেকে আনতে কুমারখালী থানা পুলিশ রওনা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো যাবে।
এ ঘটনায় গত ১ জুন কুমারখালী থানায় তিনজনকে আসামি করে মামলা করেছেন পলাশের ভাই আব্দুর রহিম। তিনিও বর্তমানে আসামি আনতে পুলিশের সঙ্গে ফেনীর পথে রয়েছেন।
মামলার আসামিরা হলেন-নাজমা আক্তার (৩০), তার স্বামী আফসার হোসেন ও মঈনুদ্দিন নামে এক ব্যক্তি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আমার ভাই পলাশ ইসলাম (৩৫) ও ২ নম্বর আসামি আফসার পূর্ব পরিচিত। আফসার লিবিয়া প্রবাসী ছিলেন। সেই সূত্রে আফসার আমার ভাইকে বিদেশ (লিবিয়া) নিয়ে যাওয়ার জন্য ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ সাড়ে চার লাখ টাকা নেন। এরপর আমার ভাই লিবিয়াতে এক বছর ২ মাস থাকলেও তাকে কোনো কাজ দেওয়া হয়নি। উল্টো আমার ভাইকে একটি অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে আফসার তার স্ত্রীকে দিয়ে ১৫ লাখ টাকা দাবি করতে থাকেন। টাকা দিতে না পারায় আমার ভাইকে ভিডিও কল দিয়ে মারধর করে দেখায়। মুখ, হাত-পা বেঁধে লোহার রড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়িভাবে মারধর করা হচ্ছে। হাত পায়ের আঙুলের নখ তুলে তার আর্ত-চিৎকারের অডিও পাঠানো হচ্ছে। ওই ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, তারা আরও তিনজনকে একইভাবে বন্দি করে রেখেছে।
এদিকে, নাজমা অনবরত বিভিন্ন নম্বর থেকে আমার ভাইকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। ভাইয়ের প্রাণ রক্ষার্থে তিন নম্বর বিবাদী মঈনুদ্দিনের ইসলামী ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আমরা দেড় লাখ টাকা পাঠিয়ে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছি। বাকি টাকার জন্য তারা বিভিন্ন নম্বর থেকে বারবার ফোন দিচ্ছে। এ অবস্থায় যেকোনো সময় বিবাদীরা আমার ভাইয়ের জানমালের ক্ষতিসাধন করতে পারে।
জানতে চাইলে আব্দুর রহিম বলেন, আমি এখন ফেনীতে যাচ্ছি পুলিশ ভাইদের সঙ্গে। ফিরে এসে বিস্তারিত জানাতে পারব। আমরা যেকোনো মূল্যে ভাইকে ফেরত চাই। দেশে তার সন্তানরা বাবার পথ চেয়ে আছে।
আসামি গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সামসুজ্জামান বলেন, র্যাব তিনজনকে আটক করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। কুষ্টিয়া পুলিশের টিম আসলে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই