বগুড়ায় বোরোর বাম্পার ফলন ঘরে তুলতে শুরু করেছে চাষিরা। মাঠে মাঠে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ভালো ফলন পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি দেখা গেছে। বোরোর ভালো ফলন হওয়ায় সরকারিভাবে ধান চাল সংগ্রহ অভিযানে মাঠে নেমেছে খাদ্য বিভাগ। চলতি মৌসুমে জেলা খাদ্য বিভাগ থেকে ৮০ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও ধান সংগ্রহ করবে ১২ হাজার মেট্রিক টন।
খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্ধারিত দিনের আগেই ধান চাল সংগ্রহ অভিযান সফল হবে। চাল সরবরাহকারী মিলাররা চুক্তিবদ্ধ হতে শুরু করেছেন।
বগুড়া জেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় সরকারি খাদ্যগুদামে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান এপ্রিল মাসের ২৮ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে। কৃষকের কাছ থেকে প্রতি কেজি ধান ৩৬ টাকা ও চালকল মালিকদের কাছ থেকে (মিল মালিক) প্রতি কেজি চাল ৪৯ টাকায় কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জেলায় সরকারিভাবে ধান ১২ হাজার ১৬৯ মেট্রিক টন ও চাল সংগ্রহ করা হবে ৮০ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। জেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে। মিলাররা ইতিমধ্যে চুক্তিবদ্ধ হতে শুরু করেছেন। জেলায় ৭১৯ জন মিলার রয়েছেন। ২৯ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত ৫৮ জন মিলার ধান চাল সরবরাহে চুক্তি করেছেন। এই চুক্তিবদ্ধ মিলাররা মিলিয়ে ২৮ হাজারেরও বেশি চাল সরবরাহ করবেন। বাদবাকি মিলাররা ১৫ মে’র মধ্যে চুক্তি হয়ে ধান চাল সরবরাহ করবেন। চুক্তিবদ্ধ মিলাররা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চাল সরবরাহ করবেন। ধান পুরোপুরি কাটা শুরু না হলেও প্রাথমিকভাবে ধান কাটার পর ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত গুদামে চাল সরবরাহ করেছে প্রায় ৪৩২ টন। ধান মৌসুম শুরু হলে মিলার ও কৃষকরা সরবরাহ অভিযান জোরেশোরে করবেন। ধান ক্রয় করা হবে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ইরি বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে। ফলন ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিক টন (চাল আকারে)। আর ধান আকারে ফলন ধরা হয়েছে ১১ লাখ ৫৬২ হাজার ২৫৬ মেট্রিক টন। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় ফলন বাড়তে পারে।
কৃষি অফিস বলছে, এ বছর এখন পর্যন্ত বোরোর বাম্পার ফলন পাওয়া গেছে।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মালিপাড়া গ্রামের বোরো চাষি মো. আশরাফ আলী জানান, ধান এখনো পুরো কাটা শুরু হয়নি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ধান কাটা শুরু হবে। তবে কিছু এলাকায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। এক বিঘা জমিতে বোরো চাষের সব মিলিয়ে খরচ ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা। ধান কাটার শ্রমিক মূল্যই বেশি। এক বিঘা জমির ধান কাটতেই দিতে হবে ৪৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা করে। ধানের দাম এখন বাজারে ১২৫০ থেকে ১৩০০ টাকা। এই ধানের দাম দেড় হাজার টাকা মণ হলে কৃষকরা লাভবান হতো। ধান চাষে আরও আগ্রহী হতো।
বগুড়া শহরের রাজাবাজারে চাল ক্রেতা জালাল হোসেন মন্ডল জানান, কৃষকের কাছে ধান থাকলে চালের দাম বাড়ে না। আর যখনই ধান চাল অন্য কোনো ব্যবসায়ীর হাতে চলে যায় তখনই দাম বাড়ে। মূলত কৃষকরা তখন আর্থিকভাবে কম লাভবান হয়ে থাকেন।
বগুড়ার মিলাররা বলছেন, চাল সরবরাহে মিলাররা চুক্তিবদ্ধ হতে শুরু করেছে। বাজারে ধানের দাম বেশি হলে মিলাররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর ধানের দাম কম থাকলে মিলাররা সরকারিভাবে চাল সরবরাহে পুরোভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সদস্য আইয়ুব আলী জানান, বাজারে সরকারিভাবে ধান বা চালের বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। বোরো মৌসুমে বাজারে স্বাভাবিক দামে ধান পাওয়া গেলে সংগ্রহ অভিযান দ্রুত সফল হবে। সফল করার জন্য মিলারদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. সাইফুল কাবির খান জানান, সরকারিভাবে যে সব মিলার চুক্তি করেছেন, তাতে নির্ধারিত সময়ের আগেই অভিযান সফল হবে। ৮০ হাজার ২৫০ মেট্রিক টনের যে লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করা হয়েছে, তাতে মিলারদের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস পাওয়া গেছে। কৃষক পর্যায়েও ধান সরবরাহ শুরু হয়েছে। ধানের মৌসুম শুরু হলে অভিযান সফল হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই