কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে খাবার, চারণভূমি ও করিডর ধ্বংস হওয়ায় প্রায়ই লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বন্যহাতির পাল। ভয়ে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন বন-পাহাড়ি এলাকার পাশে বসবাসরত জনগোষ্ঠী। গ্রামবাসী নিজেদের নিরাপদ ও খেতের ফসল বাঁচাতে ব্যবহার করছেন বৈদ্য্যুতিক ফাঁদ। এসব ফাঁদে পড়ে মারা পড়ছে বন্যহাতি। ঝুঁকি নিয়ে খাদ্য গ্রহণকালেও গভীর খাদে পড়ে মারা পড়ছে হাতি। অন্যদিকে হাতির আক্রমণে মারা যাচ্ছেন গ্রামবাসী। গত বছরের ১৫ আগস্ট থেকে চলতি বছর ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মারা পড়েছে ছয়টি হাতি। হাতির আক্রমণে দুই মাসে মারা গেছেন চার গ্রামবাসী। সর্বশেষ বুধবার চকরিয়ায় পাহাড়ের পাদদেশে তামাক খেতের কিনারা থেকে একটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করে বন বিভাগ। উপজেলার ঘুনিয়া এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়, জানান কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের কর্মকর্তা মেহরাজ উদ্দিন। বন বিভাগ ও স্থানীয়রা জানান, চকরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তামাক খেত রয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় বন্য হাতির আক্রমণ থেকে তামাক খেত রক্ষায় বৈদ্যুতিক ফাঁদ ব্যবহার করছেন কৃষকরা। এ ধরনের ফাঁদে পড়ে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে। ৪০-৪২ বছর বয়সী মৃত পুরুষ হাতিটির শরীরে বাহ্যিক কোনো অসুস্থতা চোখে পড়েনি। ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহরাজ উদ্দিন বলেন, জানুয়ারি মাসে চকরিয়া ইউএনও ও স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে বৈদ্যুতিক ফাঁদে হাতি হত্যার বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক সভা করা হয়। ঘুনিয়া এলাকার কয়েকটি তামাক খেত থেকে বৈদ্যুতিক ফাঁদ অপসারণও করা হয়েছিল। একই এলাকায় বারবার হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের ইউনুস আহমদ বলেন, বন্যহাতি পাহাড় থেকে নেমে এসে আমলকী, জলপাই, পেয়ারা, আমড়া, আম, ডুমুর, জাম, বহেরা, পেঁপে, শজিনা, বাঁশ, লতাপাতা খায়। পাহাড়ে খাদ্যের অভাব হওয়ায় হাতিগুলো নেমে এসে গ্রামে ঢুকে পড়ে। কলাগাছ খায়, বাড়িঘরে হামলা চালায়।
এর আগে গত বছরের ১৫ অক্টোবর লোহাগাড়ার চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের উত্তরে দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইনে ট্রেনের ধাক্কায় একটি হাতি মারা যায়। ১৫ আগস্ট টেকনাফে বাহারছড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যায় একটি পুরুষ হাতি। ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহেরাজ উদ্দিন জানান, কক্সবাজার উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম উত্তর-দক্ষিণ বন বিভাগের ১২টি করিডর থাকলেও বেশির ভাগই হাতি চলাচলের অনুপযোগী। রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহেরাজ উদ্দিন বলেন, ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের অধীন পাঁচটি বন বিটের যেসব স্থানে বন্যহাতির আবাসস্থল ছিল, সেখানে কলাগাছ ও ঘাস রোপণের মাধ্যমে খাদ্যভান্ডার তৈরি করা হয়েছে।
হাতির আক্রমণে দুই মাসে মারা গেছেন চারজন : এদিকে লোকালয়ে আসা বন্যহাতির আক্রমণে স্থানীয়দের মৃত্যুর ঘটনাও বেড়েছে। ২৫ জানুয়ারি লামায় মো. কালু (৫০), গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর কক্সবাজারের রামুতে আবদুল হক (৪৫), ২৬ জানুয়ারি চকরিয়ায় আবু ছিদ্দিক (৬৫) ও ৬ জানুয়ারি চকরিয়ায় বন্যহাতির আক্রমণে ফরিদুল আলম পুতু (২৫) নামে এক যুবক মারা যান।