নড়াইলের কালিয়ার আশ্রয়ণ প্রকল্প। অপরিকল্পিতভাবে ঘর নির্মাণের কারণে আশ্রয়ণের সুফল পাচ্ছেন না গৃহহীনরা। কালিয়াকে গৃহহীনমুক্ত উপজেলা ঘোষণা করলেও এখানকার বাস্তবচিত্র উল্টো। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের দেওয়া উপহারের বেশির ভাগ ঘরেই ঝুলছে তালা। খসে পড়ছে অনেক ঘরের জানালা-দরজা। কোথাও দেয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল। বর্ষার সময় প্রকল্পের ঘরগুলোর মধ্যে থই থই করে পানি। এক কথায় সেখানে বসবাসের নেই ন্যূনতম পরিবেশ। বরাদ্দ পাওয়া অনেকে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। যারা থাকছেন তারা পোহাচ্ছেন চরম দুর্ভোগ। কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারের উপহার হিসেবে এসব ঘর পেয়েছিলেন ছিন্নমূল মানুষ। ‘জমি নেই, ঘর নেই’ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ইউএনওর দায়িত্বে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। ঘরের জন্য স্থান নির্বাচনও করেছিলেন তখনকার ইউএনও।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশাল এলাকাজুড়ে চাঁচুড়ী বিল। এ বিলের এক আশে আটঘরিয়া গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। পাকা দেয়াল ও মেঝে আর ওপরে টিনের চালা। প্রতিটি ঘরের সামনে আছে ফাঁকা বারান্দা আর পেছনে শৌচাগার ও রান্নার জায়গা। বর্ষা মৌসুমে বিলের মতো ঘরগুলোর মধ্যেও পানি থই থই করে। শৌচাগার ও ঘরের পানি একাকার হয়ে যায়। পনি শুকিয়ে যাওয়ার পর বাড়ে সাপের উপদ্রব। সেখানে প্রকল্পের ১৮টি ঘরের মধ্যে মাত্র তিনটিতে বাস করছেন তিন পরিবার। বাকিগুলো খালি পড়ে আছে। বিকল্প না থাকায় অনেক কষ্টে দিন কাটছে তিনটি পরিবারের। অন্যরা দুর্ভোগ সইতে না পেরে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। লাখ লাখ টাকার এই প্রকল্প কাজে আসছে না।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাকা ঘর পেয়েছিলেন রিপা বেগম (৫২)। ঘর পেয়ে আনন্দের সীমা ছিল না তাঁর। কিছুদিনের মধ্যেই সেই আনন্দ ফিকে হয়ে যায়। উপহারের ঘরে আর থাকার পরিবেশ নেই। ছয় মাস ধরে ঘর ছিল পানির নিচে। এখন বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তিনি। আরেক বাসিন্দা নিয়ামত মোল্লা বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশের চাঁচুড়ী বিলে ছয় মাস পানি থাকে। যে কারণে ঘরগুলোও অন্তত ছয় মাস নিমজ্জিত থাকে পানিতে। পানি শুকিয়ে গেলে মারাত্মকভাবে সাপের উপদ্রব বাড়ে। ইতোমধ্যে তিনি নিজেই ২০-২২টি সাপ মেরেছেন। এখানকার বাসিন্দাদের প্রায় ৫০ হাজার টাকার হাস-মুরগি ও ছাগল সাপের কামড়ে মারা গেছে। বসবাসের পরিবেশ না থাকায় বেশির ভাগ ঘরই খালি পড়ে আছে। সবশেষ যে তিনটি পরিবার ছিল তাদেরও থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
কালিয়ার ইউএনও মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগে এখানে যোগ দিয়েছি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের দন্যদশার বিষয়টি আমার জানা নেই।’ শিগগিরই এ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।