রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ‘দ্বিতীয় টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা’ ও ‘ইন্টেরিয়র-ফার্নিচার-সাইনেজ টেকনোলজি মেলা-২০২৫’। গতকাল আইসিসিবির নবরাত্রি হলে টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. শাহজাহান মিয়া। বাংলাদেশ ওয়াটার ওয়ার্কস অ্যাসোসিয়েশন (বিডব্লিউএ) এ মেলার আয়োজক। বিডব্লিউএর সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সিটি ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন, ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান, আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক (টেক্সটাইল) ফাইজা মাহমুদ প্রমুখ।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, মেলায় তিন দিন ধরে থাকবে আধুনিক পানি ও বর্জ্যপানি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তির প্রদর্শনী, বিনামূল্যে কারিগরি সেমিনার, শুল্ক প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি ভ্রমণের ব্যবস্থা। এতে অংশগ্রহণকারীরা নতুন উদ্ভাবনী কৌশল ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সরাসরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। আইসিসিবিতে চলমান এ মেলা পানি খাতের নতুন নীতি, প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শাহজাহান মিয়া বলেন, পানি শুধু পান করার জন্য নয়, বাড়ি, শিল্প, যানবাহন ও কৃষিতে অপরিহার্য। ঢাকার ভূ-গর্ভস্থ পানি দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে, তাই নদী-জলাশয়ের পানির দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। ব্যবহার করা পানি পুনর্ব্যবহার ও সঠিক নিষ্কাশন নিশ্চিত করতে হবে। মাশরুর আরেফিন বলেন, পানি ব্যবস্থাপনায় আমরা অনেক পিছিয়ে। আমাদের এ খাতে নজর দিতে হবে। উন্নত দেশগুলোতে পানি ব্যবস্থাপনার জন্য বাজেটে আলাদা একটি বরাদ্দ থাকে। সেটা আমাদের দেশে নেই। সিটি ব্যাংক সবসময় এসব কাজে এগিয়ে এসেছে, ভবিষ্যতেও আসবে। হাসিন জাহান বলেন, পানিসম্পদ আমাদের অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশের মূল অংশ। সবার স্বার্থেই প্রয়োজন আধুনিক ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা। প্রকল্পনির্ভর কাজের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে এখনই।
আনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পানি ব্যবস্থাপনা নির্ভর করছে উদ্ভাবন, সহযোগিতা ও প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগের ওপর। এ এক্সপো সেই যৌথ যাত্রার অংশ।
এদিকে আইসিসিবির বসুন্ধরা এক্সপো ভিলেজে শুরু হয়েছে ‘ইন্টেরিয়র-ফার্নিচার-সাইনেজ টেকনোলজি এক্সপো ২০২৫’। ইন্টেরিয়র উপকরণ, ফার্নিচার সরঞ্জাম ও সাইনেজ প্রযুক্তি প্রদর্শনের এ আয়োজনে অংশ নিচ্ছে নয়টি দেশের ৫০টি প্রতিষ্ঠান। তারা প্রায় ২০০টি স্টল নিয়ে অংশ নিয়েছে। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইসিসিবির চিফ অপারেটিং অফিসার এম এম জসিম উদ্দিন, ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ উর রশিদ, বাংলাদেশ ইন্টেরিয়র ডিজাইন কোম্পানি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর (বিডিকোয়া) সভাপতি মোহাম্মদ আলী ভূঁইয়া, উড টেক সলিউশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নঈমুল হোসেন খান প্রমুখ।
এফ টাচ ইভেন্টসের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মেলায় প্রদর্শিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে আধুনিক কিচেন সলিউশন, ফার্নিচার, ডোর, স্মার্ট মিরর, হোম অটোমেশন, সফটওয়্যার, কার্টেন, বোর্ড ও ডিজাইন সেবা। প্রদর্শনী প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মেলায় বিনামূল্যে প্রবেশ ছাড়াও দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে নানা ছাড় ও বিশেষ অফার।
জসিম উদ্দিন বলেন, দেশের ইন্টেরিয়র ও ফার্নিচার প্রযুক্তি খাত দ্রুত এগোচ্ছে। এখন অনেক মেশিনারি দেশেই তৈরি হচ্ছে, স্থানীয় কোম্পানিগুলোও বিশ্বমানের সেবা দিতে পারছে। ইন্টেরিয়র প্রযুক্তি এখন দেশের নতুন সম্ভাবনার খাত। এ শিল্প দ্রুত বিকশিত হবে, আমরা সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
মাসুদ উর রশিদ বলেন, এ মেলা আর্কিটক্টদের মধ্যে অনেক সাড়া ফেলেছে। আমাকে অনেকেই জিজ্ঞেস করেছে এ মেলা সম্পর্কে। তারা এখানে এসে নতুন নানা কিছু দেখতে ও জানতে পারবে। আগে কাঁচামালের জন্য আমাদের আমদানির ওপর নির্ভর হতে হতো। এখন সেটা অনেক কমেছে।
নইমুল হোসেন খান বলেন, দ্বিতীয় ফার্নিটেক এক্সপো ২০২৫ ফার্নিচার ও উডওয়ার্কিং সেক্টরের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এটি উদ্যোক্তা, প্রস্তুতকারক ও শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় সুযোগ।