ঢাকঢোল পিটিয়ে সিলেট নগরকে ঘোষণা করা হয়েছিল দেশের প্রথম ‘ওয়াইফাই সিটি’। এজন্য ব্যয় করা হয় ৩০ কোটি টাকা। কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই নগরের ১২৬টি পয়েন্টে সংযোগ দেওয়া হয়েছিল ওয়াইফাই। কিন্তু পরবর্তীতে এ সেবা কীভাবে চলবে, পরিচালনা ব্যয় কে বহন করবে তার কোনো নির্দেশনা ছিল না। ফলে প্রকল্পটি চালুর দেড় বছরের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় ফ্রি ওয়াইফাই সেবা কার্যক্রম। তবে প্রকল্পটি আর সচল করার পরিকল্পনা সিটি করপোরেশনের নেই বলে জানিয়েছেন একজন কর্মকর্তা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটকে ‘ওয়াইফাই সিটি’ করতে নগরের ৬২টি এলাকার ১২৬টি স্থানে ফ্রি ওয়াইফাই সংযোগ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ২৭ জুন প্রকল্পটির উদ্বোধন হলেও ওয়াইফাই সংযোগ দেওয়া হয় ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল। প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতে বলা হয়েছিল, প্রতিটি অ্যাকসেস পয়েন্টে একসঙ্গে ৫০০ জন ব্যবহারকারী যুক্ত থাকতে পারবেন। এর মধ্যে একসঙ্গে ২০০ জন উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পাবেন। কিন্তু সেবা চালুর পর থেকে হতাশ হন নগরবাসী। অনেক পয়েন্টে ইন্টারনেট সংযোগই মেলেনি। আর যেসব পয়েন্টে সংযোগ মিলেছে সেগুলোতেও ইন্টারনেটের কাক্সিক্ষত গতি মেলেনি। ফলে প্রকল্পটি নিয়ে নগরবাসীকে যে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল, তা বাস্তবে রূপ লাভ করেনি।
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) সূত্র জানায়, অ্যাকসেস পয়েন্টগুলোতে প্রায় দেড় বছর ইন্টারনেট সংযোগ ছিল। কিন্তু ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিটি করপোরেশন কোনো অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় এ সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রথম এক বছর ইন্টারনেট সেবার ব্যয়ভার নির্বাহ করে বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিসিসি। এরপর আরও ছয় মাস সেবাটি চালু রাখে ইন্টারনেট সংযোগকারী প্রতিষ্ঠান ‘আমরা নেটওয়ার্ক’। বিসিসি প্রকল্পটি সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করলেও এর ব্যয়ভার নির্বাহের জন্য কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে বিদ্যুতের কাজসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা কার্যক্রমের সংস্কার করতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে ফাইবার অপটিক্যাল লাইনও কাটা পড়ে। এটি মেরামত করতে প্রয়োজন পড়ে প্রায় ৪২ লাখ টাকা। প্রকল্পটি সচল রাখতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়েও মেলেনি। একপর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
প্রকল্পটি ফের সচল করা হবে কি না এমন প্রশ্নে করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) জয়দেব বিশ্বাস জানান, দীর্ঘদিন ধরে এ প্রকল্পটি অব্যবহৃত পড়ে থাকায় এটি এখন সহজে চালু করাও সম্ভব নয়। ফের চালু করতে কোটি টাকা দরকার। এ ছাড়া ইন্টারনেটের বিল ও ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতি মাসে ৭-৮ লাখ টাকার প্রয়োজন। তবে প্রকল্পটি আর সচল করার পরিকল্পনা নেই করপোরেশনের।