বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এত বছর ছিল একটি দেশকেন্দ্রিক। সেই দেশের সেবাদাস হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিল আওয়ামী লীগ। সার্বভৌম দেশ হিসেবে একটি জনবান্ধব পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করা প্রয়োজন। তৃতীয় বিশ্বের মুখপাত্র হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ধরে রাখার পাশাপাশি প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি গড়তে হবে। যেখানে চিরায়ত সম্পর্কের পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় নতুন বাজার খুঁজতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে জাতীয় নাগরিক কমিটি আয়োজিত ‘গণ অভ্যুত্থান উত্তর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি : নতুন দিগন্তের সন্ধানে’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী বলেন, আগামীতে ভারত ও চীন এ অঞ্চলে অত্যন্ত প্রভাবশালী হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দক্ষতার সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতি মোকাবিলা করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা সার্কভুক্ত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর কথা বলেছেন। এখানে কাজ করা প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান এ এস এম আলী আশরাফ বলেন, ভারত ও চীনের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখা প্রয়োজন। নিজেদের স্বার্থেই প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের মুখপাত্র হিসেবে যেভাবে নিজেকে দাঁড় করিয়েছে, সেই অবস্থানও ধরে রাখতে হবে। তিনি বলেন, পররাষ্ট্রনীতিতে অর্থনৈতিক বিষয়ে জোর দিতে হবে। দেখতে হবে, কাদের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বেশি। রাতারাতি এই বাণিজ্য অংশীদার পরিবর্তন করা যাবে না। এদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে বাজার আরও বিস্তৃত করায় মনোযোগ দিতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেন, শেখ হাসিনার সময়ে বাংলাদেশে কোনো পররাষ্ট্রনীতিই ছিল না। পরিবর্তিত সময়ে পররাষ্ট্রনীতিতে সার্বভৌম বাংলাদেশের নীতি কী হবে, সে বার্তা দিতে হবে। বিশ্বে এখন অশান্ত পরিস্থিতি চলছে, চারদিকে ডানপন্থিদের উত্থান। বাংলাদেশেও যদি সে ধরনের কিছু হয়, তবে সেটা ধর্মপন্থি হবে। সেটা হলে আগামীর দিন চ্যালেঞ্জিং হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ শুধু দিয়েছে। বাহাত্তরে একটি দেশের কাছে পররাষ্ট্রনীতি বিক্রি করে দেওয়া হয়। একটি দেশের সেবাদাস হিসেবে কাজ করেছে। সেখান থেকে উঠে দাঁড়ানো যায়নি। জাতি হিসেবে বাঙালি জাতিকে বিশ্ব মানচিত্রে প্রভাব রাখা এবং সেটা দক্ষিণ এশিয়ায় কতটা নেতৃত্ব দিতে পারবে, সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম, ঢাবির অন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহিদুজ্জামান, জাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম প্রমুখ।