এক দশকের বেশি সময় ধরে আলোচনা চললেও এখনো আলোর মুখ দেখেনি চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় প্রকল্প বে-টার্মিনাল। আংশিক ভূমি বুঝে পাওয়া ছাড়া পুরো প্রকল্পটিই সীমাবদ্ধ কাগজে-কলমে। বন্দর ব্যবহারকারীরা প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে বরাবরই হতাশা প্রকাশ করে আসছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার এ প্রকল্প এগিয়ে নেবে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছিল ধোঁয়াশা। শেষ পর্যন্ত বে-টার্মিনাল বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকল্পটির ভৌত অবকাঠামোগত কাজ শুরু করতে বিশ্বব্যাংকের ঋণের অপেক্ষায় আছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত বছরের জুনে বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পের জন্য ৬৫ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে। এই অর্থ দিয়ে প্রকল্পের চ্যানেল (জাহাজ চলাচলের পথ) খনন ও ছয় কিলোমিটার ব্রেক ওয়াটার (সাগরের স্রোত থেকে রক্ষায় বাঁধ) নির্মাণের কথা। প্রতিশ্রুত সেই ঋণ হাতে পেলেই এ দুটি কাজ শুরু হবে। প্রকল্পের ভালো খবরের জন্য আরও ছয় মাস অর্থাৎ আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, চ্যানেল ও স্রোত প্রতিরোধক তৈরিতে বিশ্বব্যাংক ৬৫ কোটি ডলারের বিনিয়োগ নিয়ে এসেছে। আশা করি আগামী ৩-৫ মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এমওইউ হবে। এটি হবে বাংলাদেশে অন্যতম বৃহৎ বিনিয়োগ। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। ডিপিপি তৈরি হয়েছে।
বন্দরসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানান, বে-টার্মিনালের প্রায় পুরোটাই হতে চলেছে বিদেশি বিনিয়োগে। একটি টার্মিনাল দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড, একটি পিএসএ সিঙ্গাপুর এবং আরেকটি আবুধাবি পোর্ট ও চট্টগ্রাম বন্দর মিলে করার কথা। সূত্রমতে, পতেঙ্গা ও হালিশহরে সাগরের উপকূলঘেঁষে হচ্ছে বে-টার্মিনাল যা চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামোর চেয়েও বড়। ২০১৯ সালে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ হিসেবে অনুমোদন দেয়। প্রস্তাবিত ৯০০ একর ভূমির মধ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীন ৬৮ একর আগেই বুঝে পাওয়া গেছে। ৫০০ একর খাস জমি বন্দোবস্তি দেওয়া হয়েছে বন্দরের অনুকূলে। আরও কিছু জমি পাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফট ও ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ আসতে পারে। বে-টার্মিনালের চ্যানেলের গভীরতা বেশি থাকায় ১২ মিটার ড্রাফট ও ৩০০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়তে পারবে। এ ছাড়া বর্তমানে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য জোয়ারের ওপর নির্ভর করতে হয়। বে-টার্মিনাল হলে সবসময়ই জাহাজ ভিড়তে পারবে জেটিতে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, মীরসরাইসহ দেশের ইকোনমিক জোনগুলোতে উৎপাদন শুরু হলে আমাদের আমদানি-রপ্তানি অনেক বেড়ে যাবে। এজন্য অবশ্যই বে-টার্মিনাল নির্মাণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।