বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরে বাঙালিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সাম্য, মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনে কবিগুরু নিরলস কাজ করেছেন। তাঁর অনবদ্য সৃজনকর্মেও সেসব তুলে ধরেছেন বিশ্বকবি। সুরের ধারায়, কবিতার দীপ্ত উচ্চারণ ও নৃত্যের ছন্দে সেসবই তুলে ধরেছেন শিল্পীরা। এমন অনেক দৃশ্যকল্পই চিত্রিত ছিল জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ আয়োজিত ৪৩তম বার্ষিক অধিবেশনের তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায়। ‘এই কথাটা ধরে রাখিস মুক্তি তোরে পেতেই হবে’ বোধনসংগীতটির মধ্য দিয়ে গতকাল বিকালে ধানমন্ডির ছায়ানট মিলনায়তনে এবারের সম্মেলনের উদ্বোধন করেন রবীন্দ্রসংগীত গুণী ফাহমিদা খাতুন। এতে স্বাগত বক্তৃতা করেন জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সম্পাদক তানিয়া মান্নান। অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছার পাশাপাশি উত্তরীয় পরিয়ে দেন উদ্বোধনী অধিবেশনের সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী।
উদ্বোধনকালে ফাহমিদা খাতুন বলেন, এ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা নিজেদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় খুঁজে নেব। এ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানতে ও চিনতে পারব। অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে আমরা আরও বেশি অভিজ্ঞ হব। আমি এ সম্মেলনের সফলতা কামনা করছি। ডা. সারওয়ার আলী বলেন, রবীন্দ্রনাথের গান পরিবেশন ও চর্চায় যখন বাধা দেওয়া হতো তখন পুরুষদের মধ্যে জাহিদুর রহিম ও নারীদের মধ্যে ফাহমিদা খাতুন সব ভয় ও শঙ্কা উপেক্ষা করে এগিয়ে আসেন। সমগ্র বাঙালির কাছে আমরা রবীন্দ্রসংগীতকে পৌঁছে দিতে চাই।
তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্রঋণ ও শিক্ষা প্রসারের পাশাপাশি এ অঞ্চলের শিলাইদহে বসে রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত রচনা করেন। এ অঞ্চলের মানুষদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও শিক্ষার উন্নয়নে রবীন্দ্রনাথের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। আবহমান বাংলার সংস্কৃতিকে ধারণ করার জন্য একটি সম্প্রীতি ও মানবিক সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। যখন কেউ রবীন্দ্রনাথ, লালন ও জয়নুলের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে তখন বুকের ভিতর রক্তক্ষরণ হয়।
আলোচনা পর্ব শেষে সাংস্কৃতিক পর্বের শুরুতেই শিল্পীরা পরিবেশন করেন গীতিআলেখ্য ‘ফিরে চল মাটির টানে’। এরপর রবীন্দ্র রচনাবলি থেকে পাঠ করেন - ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও ত্রপা মজুমদার। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নাচের দল নৃত্যনন্দন, নৃত্যম্ নৃত্যশীলন ও ধৃতি নর্তনালয়। একক নৃত্য পরিবেশন করেন- মুনমুন আহমেদ, আবৃত্তি করেন- ডালিয়া আহমেদ। একক সংগীত পর্বে সংগীত পরিবেশন করেন ফারজানা আক্তার পপি, সেমন্তী মঞ্জরী, রোকাইয়া হাসিনা, অশোক সাহা, নুরুল মতিন সৈকত, আকলিমা খাতুন, শুক্লা পাল সেতু, ফেরদৌস আরা লিপি, মিলন ভট্টাচার্য, সুস্মিতা আহমেদ, প্রতীক এন্দ, পার্থপ্রতীম রায়, কল্লোল সেনগুপ্ত, নাইমা ইসলাম নাজ, মাইনুল ইসলাম, অনুপম বসাক তিলক, জীবিনা সঞ্চিতা হক, সমাপ্তি রায়, অদিতি মহসীন, আইরিন পারভীন অন্না, অসীম দত্ত ও শ্রাবণী মজুমদার।
দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন আয়োজক সংস্থা জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের চাঁদপুর শাখার শিল্পীরা।
আজ শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের আয়োজনের প্রথম অধিবেশন শুরু হবে সকাল সাড়ে ৯টায়। এ পর্বে থাকছে সংগীত, নৃত্যানুষ্ঠান ও আবৃত্তি। এরপর বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে প্রতিনিধি সম্মেলন। সারা দেশ থেকে আসা শিল্পীরা অংশ নেবেন এ সম্মেলনে। বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথের বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক ফকরুল আলম। আলোচক থাকবেন আলম খোরশেদ ও হামীম কামরুল হক। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সহসভাপতি মফিদুল হক। বিকাল সাড়ে ৫টায় শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রদীপ প্রজ্বালন, রবিরশ্মি, সংগীতানুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান ও আবৃত্তি দিয়ে সাজানো থাকবে দ্বিতীয় দিনের সাংস্কৃতিক পর্ব।
কাল শনিবার শেষ হবে তিন দিনের এ আয়োজন। সমাপনী আসরের বিকাল সাড়ে ৩টায় থাকছে শ্যামলীর এসওএস শিশুপল্লীতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।