২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রতিবেদন অনুযায়ী খুলনা জেলার লোকসংখ্যা ছিল প্রায় ২৬ লাখ ১৩ হাজার। ওই সময় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৬২৪ জন। গৃহস্থালি কাজে নিযুক্ত ছিলেন আরও ৮ লাখ ৪৯ হাজার তিনজন। এ ছাড়া কর্মহীন ৬ লাখ ২৭ হাজার ৩০৩ জন ও কাজের সন্ধানে ছিলেন প্রায় ৬৭ হাজার ২৬৮ জন। যা জেলার মোট লোকসংখ্যার প্রায় ২৬.৫ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শিল্পনগরী খুলনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ ধারাবাহিকভাবে কমছে। লোকসানের দায়ে গত দুই দশকে নিউজপ্রিন্ট মিল, হার্ডবোর্ড মিল, ম্যাচ ফ্যাক্টরি, চিংড়ি কারখানা ও রাষ্ট্রায়ত্ত জুটমিল বন্ধ হয়েছে। কর্মসংস্থান হারিয়েছে কয়েক লাখ মানুষ।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ জামান বলেন, পরিসংখ্যানে ২৬.৫ শতাংশ মানুষকে কর্মহীন বললেও বাস্তবে আরও বেশি। ২০১১ সালের জনশুমারি অনুযায়ী খুলনা মহানগরীর লোকসংখ্যা ছিল ১৫ লাখ। বর্তমানে লোকসংখ্যা বৃদ্ধির বদলে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। মিল-কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শহর ছেড়েছে মানুষ। একসময় এখানে চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত কারখানা ছিল ৫৯টি। যার অধিকাংশ এখন বন্ধ। রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে ৩০ হাজারের বেশি শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি চাকরি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এদিকে পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তেমন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান কলকারখানা গড়ে ওঠেনি। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে খুলনা বিভাগে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ হয় ১৭ হাজার ৪৭২ মিলিয়ন টাকা। তিন বছরের ব্যবধানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিনিয়োগ কমে দাঁড়ায় ৯০৯ মিলিয়ন টাকা। ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত খুলনায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নতুন কর্মসংস্থান হয় ১৫ হাজার ৬৩৯ জনের। যা আগের পাঁচ অর্থবছরের তুলনায় ১৫ হাজার ৩১৪ জন কম।
বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনার পরিচালক প্রণব কুমার রায় বলেন, বিমানবন্দর, পাইপলাইনে গ্যাস ও জমি অধিগ্রহণে জটিলতার কারণে খুলনায় বিদেশি বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট হয় না। নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠায় প্রত্যাশিত কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়নি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর জেলা সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা বলেন, ১৯৬৬ সালে ২৬৪টি প্লট নিয়ে খুলনার শিরোমণি বিসিক শিল্প অঞ্চল গড়ে তোলা হয়। উদ্দেশ্য ছিল উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানা গড়ে তোলা। তবে এত বছর পরও অধিকাংশ প্লট অব্যবহৃত পড়ে আছে। পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় বিদ্যুৎ ব্যবহারে উৎপাদন ব্যয় বাড়তে থাকে। পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত হলে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে উঠবে। কর্মসংস্থানের নগরী হিসেবে খুলনার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে।