ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহকে শ্বাসরোধে মৃত্যুর পর তাকে পানিতে ফেলা হয়েছে বলে ভিসেরা রিপোর্টে উঠে এসেছে।
রবিবার বাংলাদেশ পুলিশ সি আই ডি মহাখালীর রাসায়নিক পরীক্ষাগারের প্রধান নজরুল ইসলাম ও খুলনা বিভাগীয় পরীক্ষক জনি কুমার ঘোষ স্বাক্ষরিত সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর ভিসেরা রিপোর্ট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, সাজিদের শরীরে কোনো বিষাক্ত পদার্থেও উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, শ্বাসরোধের ফলে সাজিদের মৃত্যু হয়েছে। পোস্টমর্টেমের সময় থেকে আনুমানিক ৩০ ঘণ্টা আগে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘ভিসেরা রিপোর্টে যেটা এসেছে সেটা থেকে বোঝা যাচ্ছে এটা হত্যাকাণ্ড।’
একই তথ্য উঠে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে। কমিটি আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, তাছাড়া ময়নাতদন্ত, সুরতহাল ও ভিসেরা রিপোর্টের পাশাপাশি তার ফোন কল লিস্ট, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সব তথ্য ক্রস চেক করে ফাইনাল রিপোর্ট প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেছি। পাশাপাশি সরকারের উচ্চপদস্থ তদন্ত সংস্থাগুলো দিয়ে এই ঘটনার তদন্তের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
ভিসেরা রিপোর্টের পর থেকে হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে তোলপাড় হয় ক্যাম্পাস। সোমবার বেলা ১১ টায় সাজিদ হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রশাসন ভবন অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ইবি শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের সঠিক তদন্তের আশ্বাসে বেলা প্রায় ১ টার দিকে আন্দোলন স্থগিত করেন তারা।
এ সময় উপাচার্য তদন্তের ভার পিবিআইকে দায়িত্ব হস্তান্তর করাসহ ক্যাম্পাসের সার্বিক বিষয়ে সোমবার সন্ধ্যায় সিন্ডিকেট সভা এবং সভার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরবর্তী কাজ করা হবে জানান। কর্মসূচিতে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়িনসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, সাজিদকে নির্মমভাবে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এটি কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমরা কোনো টালবাহানা শুনবো না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সাজিদের হত্যাকারীকে চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
এদিকে এ ঘটনায় সোমবার বিকেলে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ইবি থানায় মামলা দায়ের করেছে সাজিদের পিতা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাজিদের পিতা আহসান হাবিবুল্লাহ ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান। ওসি মেহেদী হাসান বলেন, ‘আজ সাজিদের বাবা বাদী হয়ে ইবি থানাতে একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘সাজিদ হত্যার বিচার অবশ্যই করা হবে। এর জন্য মামলাসহ উচ্চতর তদন্তে যা করা প্রয়োজন প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করবে। এছাড়া পিবিআইকে দায়িত্ব হস্তান্তর করাসহ ক্যাম্পাসের সার্বিক বিষয়ে সিন্ডিকেট সভা হবে। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরবর্তী কাজ করা হবে। আমরা সাজিদ হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে শতভাগ কাজ করে যাবো।’
প্রসঙ্গত, সাজিদের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে গত ২১ জুলাই প্রকাশিত ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে মৃত্যুর আনুমানিক সময় উল্লেখ থাকলেও মৃত্যুর ধরন ও কারণ নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলা হয়নি। ফলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ণয়ে ভিসেরা নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় রাসায়নিক বিশ্লেষণের জন্য। রবিবার (৩ আগস্ট) ভিসেরা রিপোর্টে সাজিদকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। রিপোর্টে স্বাক্ষরকারী মেডিকেল অফিসারও এ তথ্য নিশ্চিত করেন। বিষয়টি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল