ঋতু বৈচিত্র্যের এই বাংলাদেশে একেক ঋতুতে একেক রূপ নিয়ে হাজির হয় প্রকৃতি। শীতের শেষে ঋতুরাজ বসন্তে গাছে গাছে শিমুল পলাশের সাথে সজনে ফুলগুলো প্রকৃতিকে সাজিয়েছে আপন মহিমায়। শ্বেত শুভ্র পাপড়ির মাঝে যেন গ্রামীণ নববধূর মূল্যবান অলংকারের মতো স্বর্ণালী মহামূল্যবান শোভা বিস্তার করছে সজনে ফুল। খরা সহিষ্ণু ও গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলের একটি উদ্ভিদ। ডাল ও বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করলেও আমাদের দেশে সাধারনত ডালের মাধ্যমে বা অঙ্গজ প্রজননের মাধ্যমে বংশবিস্তার করানো হয়। গ্রীষ্মকাল বিশেষত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত ডাল রোপনের উপযুক্ত সময়।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির আশেপাশে, রাস্তার দু’পাশে, নদীর বেড়িবাধে, পতিত জমিতে মওসুমের শুরুতেই ফুলে ফুলে ভরে গেছে সজনে গাছগুলো। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে সজনের ভাল ফলন হবে। সম্পূর্ন বিনা পরিচর্চায় জেলার সকল উপজেলার প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে কমবেশি সজনে গাছ রয়েছে। অনেকেই বাগানে বেড়ার খুঁটি হিসেবে সজনের ডাল রোপন করেছেন। পরে তা জীবন্ত গাছে পরিনত হয়ে সজনে ধরা শুরু করেছে। রাস্তার পাশে পতিত জমিতে ডাল পুতে রেখেছে। বিনা খরচায় চাষ হয়েছে অনেক সজনে গাছ।
পত্নীতলার আবুল হোসেন, মহাদেবপুরের ইমতিয়াজ হোসেন জানান, বহুগুনে গুনান্বিত যাদুকরি সবজি সজনে। ওষুধি গুনাগুনে ভরা, সুস্বাদু, কোনো উৎপাদন খরচ নেই। অধিক লাভজনক এবং বাজারে ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন সবজি সজনে। শীতের রিক্ততা কাটিয়ে এখন ফুলে ফুলে ভরে গেছে সজনে গাছ।
পত্নীতলা উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ঠান্ডা-গরম, লবন, খরা সহিষ্ণু এ গাছ বাংলাদেশের সর্বত্রই জন্মায়। জেলার প্রতিটি বাড়ির আশেপাশে ২/৪টি সজনে গাছ আছে। এছাড়া রাস্তার পাশে অনেক গাছ আছে। গাছগুলোতে প্রচুর ফুল এসেছে আবহাওয়া ভাল থাকলে বাম্পার ফলন হবে।
নওগাঁর ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মুনির আলী আকন্দ বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে সাদা ফুলের বর্ণিল সাজে সেজেছে উত্তরাঞ্চলের শস্যভাণ্ডার খ্যাত নওগাঁর ১১টি উপজেলার সজনে গাছগুলো। সাজনের কাঁচা লম্বা ফল সবজি হিসেবে খাওয়া হয়, পাতা খাওয়া হয় শাক-সবজি হিসেবে। সজনে পাতাকে ‘নিউট্রিশন্স সুপার ফুড’ এবং সজনে গাছকে ‘মিরাকল ট্রি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এক কথায় সজনের পুরো গাছটাই উপকারী।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, পুষ্টিগুন দিক থেকে সজনে অত্যান্ত উপকারী একটি সবজি। সজনে লবণ সহিষ্ণু একটি ফসল। অন্যান্য সবজির ক্ষেত্রে পরিচর্যার প্রয়োজন হলেও অনেকটা পরিচর্যা ছাড়াই সজনের উৎপাদন সম্ভব। সজনে অল্পদিনেই খাওয়ার উপযোগী হয় এবং বাজারজাত করা যায়। খেতে সুস্বাদু ও বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকায় সজনের আবাদ অত্যন্ত লাভজনক। তবে জেলায় কেউ বানিজ্যিকভাবে সজনে চাষ করেনি। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধি এ সবজি চাষ করতে তেমন খরচ হয় না। বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম