চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড) সংলগ্ন এলাকায় তিনটি বন্য হাতি অবস্থান করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বনাঞ্চল হ্রাস ও চলাচলের প্রতিবন্ধকতার কারণে হাতিগুলো লোকালয়ের কাছাকাছি আসছে। এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত- তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে নানা আলোচনা চলছে।
কেইপিজেডে হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে ১২ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। বিশেষজ্ঞ কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় হাতিগুলোর চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে তারা বিকল্প পথ খুঁজতে বাধ্য হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মুনতাসির আকাশ গণমাধ্যমকে বলেন, "প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখা হলে হাতিরা তাদের নির্দিষ্ট করিডর ধরে চলাচল করতে পারে। বন উজাড় হলে তাদের চলার পথ সংকুচিত হয়, যা সংঘাত বাড়াতে পারে।"
বিশেষজ্ঞ কমিটির মতে- এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাতি ও মানুষের পারস্পরিক দূরত্ব রক্ষার কার্যকর ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। আগে এই টিমের সদস্যরা হাতির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে স্থানীয়দের সতর্ক করতেন। বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের জীববৈচিত্র্য কর্মকর্তা দীপান্বিতা ভট্টাচার্য গণমাধ্যমকে বলেন, "ইআরটি থাকলে স্থানীয়দের আগেভাগে সতর্ক করা যেত। হাতিদের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করতে হলে এই টিম পুনরায় কার্যকর করা প্রয়োজন।"
কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হাতি সংরক্ষণে কাজ করছে। কেইপিজেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুশফিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, "আমরা ১০০ জন কর্মীকে প্রশিক্ষিত করেছি, যারা হাতি পর্যবেক্ষণ করছে। বন বিভাগের ইআরটি থাকার সময়ও সমস্যা ছিল, তাই আমরা বিকল্প উদ্যোগ নিয়েছি।"
পরিবেশবিদদের মতে, কেইপিজেড ও সংলগ্ন এলাকায় বন সংরক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে হাতিদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, কেইপিজেডের পাশের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ২৪৬ একর ও ৭২ একর খাসজমি বনাঞ্চল হিসেবে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণা কর্মকর্তা মো. আশরাফ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, "পরিবেশ সংরক্ষণ ও হাতিদের চলাচল নিশ্চিত করতে টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। কেইপিজেডের পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়নের বিষয়টিও পরিবেশ সংরক্ষণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।"
পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, হাতির চলাচলের পথ সংরক্ষণ করা, বনাঞ্চল রক্ষা করা এবং স্থানীয়দের সচেতন করা গেলে মানুষ ও হাতির মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব। বন বিভাগ, কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টাই এই সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান দিতে পারে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ