দীর্ঘমেয়াদি স্মার্টফোন - দীর্ঘমেয়াদি সফটওয়্যার সাপোর্ট করা ‘স্মার্টফোন’ ব্যবহারকারীদের যেমন রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা প্রদান করে, ঠিক তেমনি ব্যবহারকারীরাও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাদের সেই ফোনগুলো ব্যবহার করেন...
সফটওয়্যার সাপোর্ট কেন গুরুত্বর্ণ বিষয়
স্মার্টফোনের হার্ডওয়্যার যতই শক্তিশালী হোক, সফটওয়্যার সাপোর্টের ক্ষেত্রে স্থায়িত্বও ঠিক সমান গুরুত্ব বহন করে। অপারেটিং সিস্টেম নিয়মিত নতুন ফিচার যোগ করে, পারফরম্যান্স অপ্টিমাইজ করে এবং সিকিউরিটি আপডেট প্রদান করে যা ডিভাইসকে নিরাপদ রাখে। যদি ফোনটি নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট না পায়, তাহলে তা সাইবার আক্রমণের ঝুঁকিতে পড়তে পারে, এমনকি নতুন অ্যাপগুলোর সঙ্গে অসংগতিতে পড়তে পারে। তাছাড়া দীর্ঘমেয়াদী সফটওয়্যার সাপোর্ট নীতি যে কোনো ব্যবহারকারীদের উন্নত অভিজ্ঞতা প্রদান করে থাকে।
স্মার্টফোনের ইতিহাসে, ‘অ্যান্ড্রয়েড’ ((Android) সফটওয়্যার তাদের আপডেটের ক্ষেত্রে খুব একটা খ্যাতি অর্জন করতে পারেনি। তবে, গত পাঁচ বছরে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। অন্য সব স্মার্টফোন কোম্পানির মতো ‘অ্যান্ড্রয়েড’-ও তাদের সফটওয়্যার আপডেটে ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে। ২০২৫ সালে, অ্যান্ড্রয়েড ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনগুলোর জন্য অন্তত কয়েক বছরে ওএস (OS) আপডেট এবং সিকিউরিটি প্যাচ পাওয়া স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এমনকি অনেক বাজেট স্মার্টফোনেও আজকাল অন্তত একটি ওএস (OS) আপগ্রেড পাচ্ছে।
আজকাল স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা দীর্ঘদিন তাদের সাধের ফোনটি ব্যবহার করে থাকেন। এ কারণে, নিয়মিত ওএস (OS) আপডেট এবং সিকিউরিটি প্যাচ বর্তমান সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু সকল ব্র্যান্ডের আপডেট নীতিতে পার্থক্য থাকলেও কিছু ব্র্যান্ড অ্যাপলের দীর্ঘমেয়াদি আপডেট নীতিকে ছাড়িয়ে যেতে শুরু করেছে।
দেখে নেওয়া যাক, ২০২৫ সালে কোন কোন স্মার্টফোন ব্র্যান্ড ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে ভালো সফটওয়্যার সাপোর্ট দিতে যাচ্ছে।
গুগল (Google)
গুগলের ‘পিক্সেল সিরিজ’ অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের সফটওয়্যার সাপোর্টের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। ‘পিক্সেল ৮’ সিরিজের ক্ষেত্রে গুগল সাত বছর পর্যন্ত অ্যান্ড্রয়েড ওএস (OS) আপডেট, সিকিউরিটি প্যাচ, এবং ফিচার ড্রপ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে- যা অ্যাপলের চেয়েও ভালো। গুগলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো- গুগল তাদের পুরনো মডেলের স্মার্টফোনগুলোর জন্যও অতিরিক্ত আপডেট দিচ্ছে। যেমন- পিক্সেল এবং পিক্সেলের জন্য দুই বছর বাড়তি অ্যান্ড্রয়েড আপডেট দেওয়া হয়েছে। দ্রুত এবং ধারাবাহিক আপডেটের কারণে পিক্সেল ফোন দীর্ঘমেয়াদি সফটওয়্যার সাপোর্টের জন্য ব্যবহারকারীদের সেরা পছন্দ।
অ্যাপল (Apple)
স্মার্টফোনের বাজারে ‘অ্যাপল’ নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেটের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। যখন অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলো খন্ডিত (ragmented) সফটওয়্যার সাপোর্ট দিচ্ছিল, তখনও অ্যাপল তার ডিভাইসগুলোর জন্য অন্তত তিনটি বড় ওএস (OS) আপডেট দিত। আর আইফোন ৬ বাজারে আসার পর, পাঁচ বছরের আপডেট অ্যাপলের জন্য সাধারণ বিষয় হয়ে ওঠে। যদিও অ্যাপল কখনোই তাদের আপডেটে নির্দিষ্ট সময়সীমা সরাসরি ঘোষণা করেনি। তবে অ্যাপলের কিছু কিছু মডেলের ফোন প্রত্যাশার চেয়েও দীর্ঘ সময় ধরে নতুন আপডেট পেয়েছে। যেমন- আইফোন ৬এস, যা আইওএস ৯ দিয়ে চালু হয়েছিল এবং আইওএস ১৫ পর্যন্ত আপডেট পেয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাপে- সম্প্রতি অ্যাপল তাদের গ্রাহকদের জন্য প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করেছে যে, ‘আইফোন ১৫ প্রো’ অন্তত পাঁচ বছর সময়সীমার আপডেট পাবে। যদিও এটি ন্যূনতম সময়সীমা, তবে বাস্তবিক অর্থে অ্যাপল সাধারণত তার ফোনগুলোকে আরও দীর্ঘ সময় সাপোর্ট দিয়ে থাকে, যতক্ষণ না হার্ডওয়্যার সীমাবদ্ধতা আপডেটে বাধা সৃষ্টি করে।
স্যামসাং (Samsung)
‘স্যামসাং’ এবং ‘গুগল’ এখন ফ্ল্যাগশিপ ফোনের আপডেট নীতিতে সমান পর্যায়ে রয়েছে। বিখ্যাত এই স্মার্টফোন কোম্পানি তাদের গ্রাহকদের জন্য ‘স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৪’ সিরিজ এবং পরবর্তী ডিভাইসগুলোর জন্য স্যামসাং সাত বছরের ওএস (OS) আপগ্রেড এবং সিকিউরিটি প্যাচ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যার মধ্যে স্যামসাংয়ের ফ্লিপ, ফোল্ড এবং গ্যালাক্সি ট্যাব এস১০ মডেলও অন্তর্ভুক্ত। শুধু ফ্ল্যাগশিপ নয়, স্যামসাংয়ের কিছু গ্যালাক্সি ‘এ’ সিরিজের বাজেট ফোনেও ছয় বছর পর্যন্ত আপডেট দেওয়া হচ্ছে- যা অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী ব্র্যান্ডের ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলোর আপডেট নীতির চেয়েও ভালো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, স্যামসাং তার ফ্ল্যাগশিপ এবং বাজেট ফোন উভয়ের জন্যই সময়মতো আপডেট প্রদান করে। ফলে সফটওয়্যার আপডেটে স্যামসাং সেরা অ্যান্ড্রয়েড ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ফেয়ারফোন (Fairphone)
ফেয়ারফোনের টেকসইতা (sustainability) এবং দীর্ঘমেয়াদি সফটওয়্যার সাপোর্টের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ফেয়ারফোন ২, যা ২০১৫ সালে বাজারে আসে, সেটি সাত বছরেরও বেশি সময় আপডেট পেয়েছিল- যা অ্যান্ড্রয়েড দুনিয়ায় খুবই বিরল। ফেয়ারফোন ৫ পাঁচ বছরের ওএস (OS) আপডেট এবং আট বছরের সিকিউরিটি প্যাচ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জানা গেছে, কোম্পানিটি তাদের স্মার্টফোনগুলোয় ১০ বছর পর্যন্ত সিকিউরিটি আপডেট বাড়ানোর চেষ্টা করছে। যদিও ফেয়ারফোনের আপডেট অন্যান্য ব্র্যান্ডের মতো ধারাবাহিক নয়। ফেয়ারফোন দীর্ঘ সফটওয়্যার সাপোর্ট দিলেও ওএস আপগ্রেড ও সিকিউরিটি প্যাচ প্রকাশে তারা কিছুটা অনিয়মিত।
সম্ভাবনা দেখাচ্ছে যেসব- ‘স্মার্টফোন’
গুগল, স্যামসাং এবং অ্যাপল আপডেট নীতিতে অনেক এগিয়ে গেলেও, এখনো অনেক ব্র্যান্ডের উন্নতির প্রয়োজন আছে। সাওমি, ওয়ানপ্লাস এবং ওপ্পো এখনো এই বিষয়ে (আপডেট নীতি) তাদের যথেষ্ট অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। এমনকি মটোরোলা পর্যন্ত তার ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলোর জন্যও নিয়মিত আপডেট দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। সব মিলিয়ে, গুগল এবং স্যামসাং তাদের সাত বছরের আপডেট নীতির মাধ্যমে বাজারে শীর্ষে রয়েছে, যা দীর্ঘ সফটওয়্যার সাপোর্ট সন্ধানী ব্যবহারকারীদের জন্য সেরা পছন্দ। অন্যদিকে অ্যাপল এখনো নির্ভরযোগ্য এবং ধারাবাহিক অপশন, বিশেষ করে যারা আইওএস ইকোসিস্টেমে যুক্ত আছেন।
তথ্যসূত্র : গিজমো চায়না