ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এ এক বিস্ময়কর রাত! স্কোরবোর্ডে জ্বলজ্বল করছিল পাহাড়সম ১৯৬ রান। ইমন-তানজিদের ব্যাটে চড়ে যেন জয়ের সরণিতেই হাঁটছিল বাংলাদেশ। অথচ, কে জানত, বিধ্বংসী মোহাম্মদ হারিসের এক হাতেই লেখা হবে টাইগারদের হোয়াইটওয়াশ হওয়ার লজ্জার উপাখ্যান! লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৬ উইকেটে ১৯৬ রান করেও ৭ উইকেট আর ১৬ বল হাতে রেখেই পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো বাংলাদেশকে।
এই হোয়াইটওয়াশ নিয়ে সমর্থকদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। একই সঙ্গে সামনে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
রবিবার লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে ১৯৬ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়েও জয় অধরাই থেকে যায় বাংলাদেশের জন্য। পাকিস্তানের তরুণ ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ হারিসের বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে ১৬ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে নেয় স্বাগতিকরা।
প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশ ছিল ছন্নছাড়া। দ্বিতীয় ম্যাচে শরিফুল ইসলামের ইনজুরি এবং ব্যাটিং ব্যর্থতাকে পরাজয়ের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন লিটন। তবে শেষ ম্যাচে ব্যাটিং নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন অধিনায়ক, বোলারদের দায়ী করেন হারের জন্য।
লিটন বলেন, ‘অবশ্যই হতাশ। আমরা ভালো বোলিং করিনি। আগের দুই ম্যাচে ব্যাটিং ও ফিল্ডিংও ভালো ছিল না। তবে সম্ভবত এই ম্যাচে ব্যাটিং খুব ভালো হয়েছে।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারের পর লিটনের পর্যবেক্ষণ, প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যান অনুযায়ী কৌশল নির্ধারণে ঘাটতি ছিল বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে। তিনি বলেন, ‘ভিন্ন ব্যাটসম্যানদের আলাদাভাবে সামলাতে জানতে হবে। একেকজনের শক্তি ও দুর্বলতা ভিন্ন। সেটা বুঝে বোলিং করতে হবে আমাদের।’
তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পারভেজ হোসেন ইমন ও তানজিদ হাসানের দারুণ সূচনায় উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। ৬৪ বলে ১১০ রানের ওপেনিং জুটি গড়েন এই দুই তরুণ। পাকিস্তানের মাটিতে সফরকারী কোনো ওপেনিং জুটির এটিই প্রথম শতরানের পার্টনারশিপ।
ইমন ৩৪ বলে ৬৬ ও তামিম ৩২ বলে ৪২ রান করলেও পরের ব্যাটাররা সেই জোশ ধরে রাখতে পারেননি। লিটন ও হৃদয়ের তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৩২ বলে ৪৯ রান যোগ হলেও ইনিংসের শেষ ভাগে ছন্দ হারায় বাংলাদেশ। শেষ ৫৬ বলে আসে মাত্র ৮৬ রান।
লিটন ১৮ বলে ২২ ও হৃদয় ১৮ বলে ২৫ রান করে ফিরলে ইনিংসের গতি আর বাড়েনি। শামীম হোসেন শুরুতে কিছুটা আশা জাগালেও তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হন। শেষদিকে জাকের আলি ও তানজিম হাসানের দুটি ছক্কা বড় সংগ্রহে অবদান রাখে বটে, তবে তা যথেষ্ট ছিল না।
তবে অধিনায়ক মনে করেন, ব্যাটিংয়ে অধিকাংশই দায়িত্ব নিয়েছেন। তার ভাষায়, ‘ইমন ও তামিম খুব ভালো শুরু করেছে। শুধু তারা নয়, বেশিরভাগ ব্যাটসম্যানই দায়িত্ব নিয়ে খেলেছে।’
সিরিজজুড়ে পরাজয়ের বেদনায় ডুবলেও গ্যালারিতে সমর্থকদের ভালোবাসা পেয়েছে বাংলাদেশ দল। এই সমর্থনকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে লিটন বলেন, ‘দর্শকরা অসাধারণ ছিল। দুই দলকেই সমর্থন করেছে, দারুণভাবে উপভোগ করেছে খেলা।’
অবশেষে সমর্থকদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করে লিটন বলেন, ‘বাংলাদেশি সমর্থকদের কাছে আমি সত্যিই দুঃখিত। আমরা কোনো ম্যাচ জিততে পারিনি। আশা করি, আমরা ঘুরে দাঁড়াব।’
বিডি-প্রতিদিন/শআ