ফুটবলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, হট্টগোলে খেলা পরিত্যক্ত বা স্থগিত হওয়াটা নতুন কিছু নয়। এখানে রেফারির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি পরিবেশ বা পরিস্থিতি দেখে কোনো ঘোষণা দেবেন। দেশের ঘরোয়া আসর কিংবা বিশ্ব ফুটবলে এ ধরনের ঘটনা অনেক ঘটেছে। কিন্তু আলোর স্বল্পতায় এবার ফেডারেশন কাপ ফাইনালে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের শেষ ১৫ মিনিট ম্যাচ হয়নি। ময়মনসিংহে বসুন্ধরা কিংস ও ঢাকা আবাহনীর নির্ধারিত সময়ে ম্যাচটি ১-১ ড্র ছিল। বাইলজে আছে ফাইনালে নির্ধারিত সময় ফল নিষ্পত্তি না হলে ম্যাচ গড়াবে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। এতেও ড্র হলে টাইব্রেকারে শিরোপা ঠিক হবে। ময়মনসিংহে ফাইনালে রেফারি ছিলেন সাইমন হাসান।
সাইমন বাইলজ অনুসরণ করেই ম্যাচ পরিচালনা করছিলেন। প্রথমার্ধেই প্রথমে গোল করে এগিয়ে যায় কিংস। পরে তা আবাহনী শোধ করে দেয়। ৯০ মিনিটে ইনজুরি টাইম ব্যবহার করার পরও কোনো দল জিততে পারেনি। স্বাভাবিকভাবে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। প্রথম ১৫ মিনিট খেলানোর পরও গোল হয়নি। বাকি ১৫ মিনিট খেলা হবে সেই পর্যাপ্ত আলো ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইট নেই। থাকলে বাকি ১৫ মিনিটে প্রয়োজনে টাইব্রেকার করা যেত। বড় সমস্যাটা হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে শুরুর পরই। ১ বা দেড় মিনিট খেলা চলার পরই প্রচণ্ড ঝড় ও বৃষ্টি শুরু হয়। প্রায় এক ঘণ্টা ম্যাচ বন্ধ থাকার পর ফের খেলা শুরু হয়। এখানেই বড় সময়টা ব্যয় হয়ে যায়। প্রশ্ন উঠেছে যেহেতু ফ্লাডলাইট নেই সেখানে তো রেফারির উচিত ছিল ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা। ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়ালে তো অন্ধকার নেমে আসবে। এক ঘণ্টা সময় তো বৃষ্টিতেই নষ্ট। হ্যাঁ, এটা ঠিক ঘরোয়া ফুটবলে অতীতে এমন ঘটনা ঘটেছে। বৃষ্টির কারণে খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা। সাইমন সেই পথ বেছে নিলেন না কেন? ম্যাচ যখন উভয় দলই ১-১ গোল করেছে তখন নতুন করে ফাইনাল খেলতে কারোর আপত্তি থাকত না।
বাইলজে কী আছে তা বাফুফেরই জানা। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে কারোর হাত নেই। রেফারি ফাইনাল বাতিলও করতে পারতেন। এখানেই বাফুফেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়। কেননা তারা যখন ফাইনাল ভেন্যু ঠিক করেছেন তখন তো ভাবা উচিত ছিল ময়মনসিংহে ফ্লাডলাইট নেই। বৃষ্টি হলেও ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে কিংবা টাইব্রেকারে গড়ালে কী করতে হবে। আসলে এখানেও কোনো বিকল্প পথও ছিল না। কারণ এখন ফ্লাডলাইট তো শুধু কিংস অ্যারিনাতেই আছে। এটা কিংসের ভেন্যু, ফাইনাল করতে হবে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে। গতবারও ফাইনাল এখানে হয়েছে। তার আগে হয়েছে কুমিল্লায়।
তাহলে ম্যাচ স্থগিত নিয়ে বিতর্ক উঠছে কেন? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা কোনো কোনো মিডিয়ায় যেভাবে লেখালেখি হচ্ছে, এমন ঘটনা যেন বাংলাদেশের ফুটবলে প্রথম ঘটল। আবার এটাও বলা হচ্ছে, দুই দলকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করলেই তো সব সমাধান হয়ে যেত। হ্যাঁ, ১৯৮০ ও ১৯৮২ সালের ফাইনালে নির্ধারিত সময়ে ফল না হওয়ায় দুই দলকে যৌথ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। অথচ তখন থেকেই ঢাকা স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইট ছিল। বাইলজ ভেঙেই দুই দলকে চ্যাম্পয়ন করানো হয়েছিল। তখন তো আর ফিফার এত নিয়মকানুন ছিল না। এখন কি তা সম্ভব? অবৈধ পথে হাঁটলেই শাস্তি। আসলে এসব সবারই জানা। তার পরও মূল ঘটনা কিন্তু অতিরিক্ত সময়ে প্রথমার্ধে কিংসের ফাহিমের লাল কার্ডটা। বাকি সময়ে কিংসকে খেলতে হতো ১০ জন নিয়ে। এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে আবাহনী জিততেও পারত। কিন্তু ফুটবলকে ঠিকমতো তো লাথি মারতে হবে। সেই আলো কি ছিল? যাক পেশাদার লিগ কমিটি আর দেরি করেনি। গতকালই বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফাইনালের ১৫ মিনিট ময়মনসিংহে হবে ২৯ এপ্রিল।