হাসান সাহেব চা খেতে পছন্দ করেন। বছরের পর বছর ধরে তিনি চা খেয়ে আসছেন। দিনে ১০-১২ কাপ চা ছাড়া যেন তার জীবন চলে না। ভোরে ঘুম ভাঙতেই প্রথম কাজ চা খাওয়া। দুপুরে ভাত খাওয়ার পর, বিকালে আড্ডায়, রাতে ঘুমানোর আগে, সব সময়ই তার মনে চায়ের চিন্তা। তিনি বলেন, চা খেলেই শরীরটা চাঙা লাগে, মেজাজ ফুরফুরে হয়, আর দিনটাও বেশ ভালো কাটে। কিন্তু এই দীর্ঘদিনের চা খাওয়ার নেশার সঙ্গেই আছে এক বিব্রতকর সমস্যা। চা খেতে গিয়ে প্রথম চুমুকে প্রায়ই গাল বা জিহ্বা পুড়ে যায়। তাই প্রথম চুমুক নেওয়ার আগে তার মনে ভয় কাজ করে। অনেক সময় সেই ভয়েই তিনি চায়ের কাপ টেবিলে রেখে দেন, ঠান্ডা হলে আবার খান। এভাবে ঠান্ডা চা খাওয়ার অভ্যাস তার পছন্দের তালিকায় ঢুকে গেছে। তবে লজ্জায় মানুষের সামনে চা খেতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তাই কৌশলে আড্ডায় চা আসলে গল্পে গল্পে সময় নেন, যতক্ষণ না চা ঠান্ডা হয়। তখন নিঃশব্দে চুমুক দিয়ে ফেলেন। এখন এলাকায় সবাই এটা জানে। তারা এ নিয়ে মনে মনে হাসে। আবার সুযোগ পেলে টিপ্পনী কাটে। ঘটনা ঘটলো মেয়ের বিয়েতে। বিয়েবাড়িতে জামাইপক্ষের লোকজনকে আপ্যায়ন করতে সবাই ব্যস্ত। ছেলের বাবা, চাচা, মামা, আত্মীয়স্বজনসহ বসেছেন। নতুন বেয়ান চা-বিস্কুট পরিবেশন করলেন। সবাই খুশি মনে চা খাচ্ছেন। হাসান সাহেবকে বলা হলো, ‘আপনি চা খান না কেন?’
তিনি ভদ্রতাসূচক হাসি দিয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, খাচ্ছি।’
আসলে তিনি পুরোনো কৌশলই কাজে লাগাচ্ছেন। ধীরে ধীরে গল্প করছেন। সময় নিচ্ছেন যাতে চা ঠান্ডা হয়। কিন্তু বেয়ান বারবার অনুরোধ করলেন, ‘আপনি এখনই চা খান। না হলে চা ঠান্ডা হয়ে যাবে।’
সম্মান রাখতে গিয়ে হাসান সাহেব একেবারে অপ্রস্তুত অবস্থায় চায়ের কাপ মুখে তুললেন। যেই চুমুক দিলেন, অমনি সর্বনাশ! চা এত গরম! গরম সামলাতে গিয়ে তিনি কুলকুলি করে ফুঁ দিতে দিতে চা ছড়িয়ে ফেললেন। আশপাশে যারা ছিলেন তাদের সাদা পাঞ্জাবিতে পড়ল গরম চায়ের ছিটে। কোথাও ছোট ছোট বাদামি দাগ, কোথাও বড় বড় ছোপ। এক মুহূর্তে হাসিখুশি পরিবেশ নিস্তব্ধ হয়ে গেল। পাঞ্জাবির দাগ দেখে কারও চোখ কপালে, কারও মুখ লাল। হাসান সাহেব বিষণ্ন বদনে চারদিকে তাকিয়ে বললেন, ‘দোষটা আসলে চায়েরই। আমি তো নিরীহ চা প্রেমী।’ তার এ কথাতেই সবাই হো হো করে হেসে উঠল। শুধু হাসতে পারছেন না হাসান সাহেব। গরম চায়ে পোড়া জিভের জ্বলুনি এখনো যায়নি।
-মধুখালী, ফরিদপুর