জমে উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন। সবশেষ জগন্নাথ কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৮৭ সালে। ৩৮ বছর পর এ নির্বাচন সামনে রেখে ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ। সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীর মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। ২০০৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দুই দশক পর শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রাম ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঊর্ধ্বতনের কাছে প্রেরিত জকসু বিধি শিগগিরই অনুমোদিত হবে। অনুমোদিত বিধি অনুসারে নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যক্রম শুরু হবে ৮ অক্টোবর। এরপর ছাত্র সংগঠন, সাংবাদিক সংগঠন ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে জকসু নির্বাচনের নীতিমালা ও আচরণবিধি প্রণয়ন হবে ৯ থেকে ১৭ অক্টোবরের মধ্যে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে ১৮ অক্টোবর।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৬ অক্টোবর। ভোটার তালিকা সংশোধন (আপত্তি/অন্তর্ভুক্তিসহ) ২ নভেম্বর। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ৫ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র জমা ১২ নভেম্বর; বাছাই ১৪ নভেম্বর। মনোনয়নে আপত্তি (যদি থাকে) নিষ্পত্তি করা হবে ১৬ নভেম্বর। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৭ নভেম্বর। ভোট গ্রহণ ২৭ নভেম্বর। এর আগে ২৬ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় জকসুর সংবিধি গৃহীত হয়। খসড়া সংবিধিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত সব শিক্ষার্থী ভোটার এবং প্রার্থী হতে পারবেন, তবে প্রফেশনাল কোর্সে অধ্যয়নরত, বিশেষ ডিগ্রিধারী কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে সংযুক্ত শিক্ষার্থীরা জকসুর আওতাভুক্ত হবেন না।
জকসু সংবিধিতে ছাত্র সংসদের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন এবং অন্যান্য জাতীয় গণ আন্দোলনের চেতনা ধারণ ও প্রচারের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা, নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশ এবং মুক্তচিন্তার চর্চাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সংবিধি অনুযায়ী, জকসুর কাঠামোয় ২১ সদস্যবিশিষ্ট একটি নির্বাহী কমিটি থাকবে, যার সভাপতি হবেন উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ হবেন কোষাধ্যক্ষ পদাধিকারবলে। বাকি ১৯ পদে সরাসরি নির্বাচন হবে। একই সঙ্গে সংবিধিতে হল সংসদের কাঠামোও যুক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি হলে প্রভোস্ট হবেন হল সংসদের সভাপতি এবং সেখানে ১৭ সদস্যের একটি নির্বাহী কমিটি গঠিত হবে।
জকসু কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদে যেসব পদে নির্বাচন করা যাবে- সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস), ইতিহাস-ঐতিহ্যবিষয়ক সম্পাদক, শিক্ষা ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া-বিষয়ক সম্পাদক, সাহিত্য, প্রকাশনা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক, অর্থবিষয়ক সম্পাদক, ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক, পরিবহনবিষয়ক সম্পাদক, সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক, পাঠাগার ও সেমিনারবিষয়ক সম্পাদক, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক এবং সদস্য পদে পাঁচজন। জকসু নির্বাচন সামনে রেখে ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনের নেতারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। নির্বাচন নিয়ে ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছেন তাঁদের মতামত। এ বিষয়ে জবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, ‘ছাত্রদল সব সময়ই ছাত্রছাত্রীদের অধিকার আদায়ে বদ্ধপরিকর।’ জকসু নিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল আলিম আরিফ বলেন, ‘আমরা স্বপ্নের ক্যাম্পাস গড়তে চাই।’
জবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রায়হান রাব্বি হাসান বলেন, ‘আশা করি জবিয়ানরা নির্বাচনের মাধ্যমে তাঁদের প্রতিনিধি খুঁজে পাবেন।’ সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইভান তাহসীন বলেন, ‘নির্বাচিত ছাত্র সংসদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংকট কেটে উঠতে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।’ বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের মুখ্য সংগঠক ফেরদৌস শেখ বলেন, ‘জকসু শুধু একটি নির্বাচন নয়, এটি হবে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম।’