সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের লক্ষ্যে সাংবাদিক নীতিমালা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনে সংশোধনের আশ্বাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল ‘সাংবাদিক/ গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নীতিমালা, ২০২৫’ নিয়ে নির্বাচন কমিশন বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এতে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, তাহমিদা আহমদ, আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ও ইসি সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। আরএফইডি সভাপতি কাজী জেবেল মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের জন্য প্রস্তাবিত নীতিমালা উপস্থাপন করেন এবং তা ইসির কাছে হস্তান্তর করেন। সঞ্চালনা করেন আরএফইডি সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৩ জুলাই ‘সাংবাদিক/গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নীতিমালা, ২০২৫’ জারি করে ইসি। এতে ভোটকক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচার ও গোপন কক্ষের ভিতরে গিয়ে ছবি তোলায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিক সরাসরি কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন; পরে প্রিসাইজিং অফিসারকে অবহিত করে তথ্য, ছবি ও ভিডিও নেবেন; গোপন কক্ষের ছবি তোলা যাবে না; একসঙ্গে দুজনের বেশি সংবাদকর্মী ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না; ভিতরে থাকতে পারবেন সর্বোচ্চ ১০ মিনিট ও ভিতরে নির্বাচন কর্মকর্তা, এজেন্ট বা ভোটারের সাক্ষাৎকার নেওয়া যাবে না এমন বিষয় যুক্ত করা হয়। আরএফইডি নেতারা সার্বিক বিষয় নিয়ে ভিন্নমত, আপত্তি তুলে ধরে জানিয়েছেন, বিদ্যমান নীতিমালা বহাল থাকলে সাংবাদিকদের অবাধ তথ্যপ্রবাহ বিঘ্নিত হবে। সাংবাদিকদের এসব কড়াকড়ি আরোপ করলে অনিয়ম রোধে ইসির উদ্যোগের সব প্রচেষ্টা ভেস্তে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিমালা সংশোধন করতে হবে। অনুমোদিত সাংবাদিকদের কেন্দ্রে প্রবেশে প্রিসাইডিং অফিসারকে অবহিত করার বিধান বাদ দেওয়ার দাবি জানানো হয়। গোপন কক্ষের ছবি ধারণে বারণ থাকলেও নির্বাচনি অনিয়মের সময় এটি প্রযোজ্য হবে না। একসঙ্গে অন্তত পাঁচজন সাংবাদিককে ভোটকক্ষে প্রবেশের সুযোগ, গণমাধ্যম প্রতিনিধিকে বাধা দিলে দোষী সাব্যস্ত করার বিধান যুক্ত করারও দাবি জানানো হয়। নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ‘আপনারা-আমরা সবাই স্বচ্ছ নির্বাচন চাই। একটি ট্রান্সপারেন্ট ভোটের জন্য আপনাদের সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন। অন্যায় প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। কাজেই আপনাদের সহযোগিতা চাই। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে দাবি লিখিতভাবে দিয়েছেন। এটি পর্যালোচনা করে আপনাদের জন্য সহজ হয়, যেটা উভয় পক্ষের জন্য, মানুষের জন্য স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য, ফেয়ার নির্বাচনের জন্য যেটা ভালো হয় সেটা ইনশাল্লাহ করা হবে।’
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘সবচেয়ে মুশকিল হয়ে গেল কি! আমি-আপনি-আপনারা সবাই মিলে কেউ কিন্তু আস্থার জায়গায় নেই। আমি আস্থার জায়গায় আছি এই দাবি করি না। এই যে আস্থার সংকট এটা আমাদের জাতীয় সংকট।’ নীতিমালার খসড়া নিয়ে সাংবাদিকদের দাবি বিশ্লেষণ করে সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ বরাবরের মতো স্বচ্ছ নির্বাচনের লক্ষ্যে খোলা মাঠে ভোটের পক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, ‘ট্রান্সপারেন্ট নির্বাচন যদি চান তাহলে ওপেন স্পেসে নির্বাচন করার মানসিকতা তৈরি করেন, সেটাই হবে স্বচ্ছ নির্বাচন। তা না হলে ট্রান্সপারেন্ট নির্বাচন কখনো হবে না। এত সাংবাদিককে একসঙ্গে অ্যাকোমোডেট করা যাবে না।’ নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমদ অবাধ তথ্যপ্রবাহের সুযোগ উন্মুক্ত রাখার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।