২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) নতুন কমিশনার হিসেবে যোগ দেন জুলফিকার আলী হায়দার। এর আগে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে উপকমিশনার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। ২৭ আগস্ট খুলনার সাবেক পুলিশ কমিশনার মোজাম্মেল হককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর পর সেখানে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এদিকে খুলনায় যোগদানের মাত্র আট মাসের মধ্যে জুলফিকার হায়দারের ওপর আস্থা হারিয়েছে সাধারণ মানুষ। পুলিশি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় প্রায় প্রতি রাতেই নগরে খুন, রাহাজানি, ছিনতাই ও গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটছে। পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং, মাদক কারবার থেকে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে হত্যা-পাল্টা হত্যার ঘটনা ঘটে। এ সময়ের মধ্যে ‘আশিক বাহিনী’, ‘নূর আজিম বাহিনী’, ‘গ্রেনেড বাবু বাহিনী’সহ বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী দলের উত্থান হয়েছে। এরা প্রকাশ্যে মাদক কারবার, ভূমি দখল, চাঁদাবাজি, অস্ত্র বেচাকেনা ও ভাড়াটে খুনে জড়িত। সর্বশেষ ২৬ জুন রাতে রূপসার রাজাপুরে দুই দলের গুলি বিনিময়ে একজন নিহত ও দুজন গুলিবিদ্ধ হন। হতাহতরা সবাই গ্রেনেড বাবু দলের সদস্য বলে জানা গেছে। অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়িতে নগরে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা-নির্যাতনে জড়িত পুলিশ সদস্য ও নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের অভিযোগ রয়েছে। এদিকে জুলফিকার আলী হায়দারকে ‘অযোগ্য’ ও ‘স্বেচ্ছাচারী’ দাবি করে তাকে অপসারণে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন ছাত্র-জনতা। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দেওয়া এ আলটিমেটামে কমিশনারকে অপসারণ না করলে আজ দুপুর ১২টা থেকে খুলনা অচল কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কর্মসূচিতে অংশ নিতে সব রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিও আহ্বান জানানো হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে রাজপথে সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচি দেওয়া হয়। আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা বলেন, নগরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার। খুলনায় তার যোগদানের পর থেকে গত চার মাসে অন্তত তিন ডজন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তিনি এখন সন্ত্রাসী, গডফাদারদের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কমিশনার কোনো উদ্যোগ নেননি। নিজের ইচ্ছা ও খেয়ালখুশি মতো চলতে গিয়ে খুলনায় পুলিশের দুর্নাম কুড়িয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থানে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত এসআই সুকান্তকে জনতা আটক করে পুলিশে দিলেও তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে বৃষ্টিতে ভিজে আমরা যখন আন্দোলন করেছি তখন পুলিশ কমিশনার এসি রুমে বসে তার অনুগতদের আমাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করার জন্য পাঠিয়েছেন। কিন্তু আমরা খুলনা শহরে লিয়াজোঁভিত্তিক দলীয় প্রশাসন চাই না। কেন সুকান্তকে ছাড়া হলো তার কোনো সুদুত্তর আমরা পাইনি। তাকে ধরা যদি আইনের মারপ্যাঁচ হয়ে থাকে তাহলে এখন কীভাবে তাকে গ্রেপ্তার করা হলো তারও সুস্পষ্ট জবাব দিতে হবে। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার খানজাহান আলী থানা এলাকা থেকে স্থানীয়রা মারধর করে সুকান্তকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তার বিরুদ্ধে খুলনায় চারটি মামলা রয়েছে। কিন্তু মামলা থাকার পরও তাকে ছেড়ে দেওয়া হলে বুধবার দুপুর থেকে ধারাবাহিক আন্দোলনে নামেন বিক্ষুব্ধরা।