ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলার পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পুরোনো এক প্রস্তাবের প্রসঙ্গ টেনে এনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন। তিনি জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মস্কো ও তেহরানের মধ্যে ২০ বছরের কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি সইয়ের সময় রাশিয়া ইরানকে যৌথভাবে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু ইরান সে প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি।
রুশ বার্তা সংস্থা 'তাস'-কে দেওয়া এক বক্তব্যে পুতিন বলেন, ‘আমরা আমাদের ইরানি বন্ধুদের সঙ্গে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় যৌথ কাজের প্রস্তাব দিয়েছিলাম; কিন্তু তারা সে বিষয়ে আগ্রহ দেখায়নি। বাস্তবে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা-ই হয়নি।’
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরান এ সহযোগিতা নিলে হয়তো সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ হামলায় তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার যে দুর্বলতা দেখা গেছে, তা এড়ানো যেত।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার তীব্র সমালোচনা করেছে রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ হামলা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকে চরম ঝুঁকিতে ফেলবে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচিও কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই হামলা জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এর গুরুতর পরিণতি ইরান নিজেই নির্ধারণ করবে।’ তিনি আরও জানান, ইরান নিজেদের আত্মরক্ষার স্বার্থে যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের অধিকার রাখে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা—নাতানজ, ফোরদো ও ইসফাহান। এসব স্থাপনা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির প্রধান ভিত্তি হিসেবে পরিচিত।
পাশাপাশি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইরানের পশ্চিম, পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলের অন্তত ছয়টি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, এতে ইরানের ১৫টি উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার ধ্বংস হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, দূরনিয়ন্ত্রিত ও মানবচালিত আকাশযানের (ম্যানড-অ্যান্ড-রিমোট সিস্টেম) সাহায্যে এই হামলা চালানো হয়। এতে ইরানের সামরিক ঘাঁটির রানওয়ে, ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার ও জ্বালানি সরবরাহকারী উড়োজাহাজ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তাদের আরও দাবি, ইরানের এফ-১৪, এফ-৫ ও এএইচ-১ মডেলের যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারও ধ্বংস হয়েছে। ফলে দেশটির বিমানঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন ক্ষমতা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে এবং সামরিক আকাশ অভিযানে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি হয়েছে।
তবে ইরান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ হামলার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।
সূত্র: তাস
বিডি প্রতিদিন/আশিক