মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও হামলা ও ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল অব্যাহত রেখেছে ইহুদিবাদী ইসরায়েল। পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের জমি দখলের জন্য বুধবার দুটি সামরিক আদেশ জারি করেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফার তথ্য মতে, পশ্চিম তীরের কালকিলিয়া গভর্নরেটের কাছে বসতি সম্প্রসারণ ও অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২ দশমিক ৫ হেক্টর ফিলিস্তিনি জমি দখলের ডিক্রি জারি করা হয়েছে। কালকিলিয়ায় ইসরায়েলি বসতি কার্যক্রম পর্যবেক্ষক মুনিফ নাজ্জাল জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কালকিলিয়ার পুবে আজজুন শহরের ২.৫ হেক্টর জমি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছে। দখল করা এ জমিতে একটি সড়ক নির্মাণ করা হবে, যা আলফি মেনাশে বসতিকে কালকিলিয়া-নাবলুস সড়কের সঙ্গে যুক্ত করবে। দ্বিতীয় আদেশে আজজুন ও জাইয়ুস শহরে প্রায় ২ দশমিক ১ হেক্টর জমি দখলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যেখানে তজুফিম বসতির চারপাশে নিরাপত্তা প্রাচীর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। আলফি মেনাশে ও তজুফিম উভয় বসতিই আজজুন, জাইয়ুস ও কাফর থুলথ শহরের ফিলিস্তিনি মালিকানাধীন জমির ওপর নির্মিত। ওয়াফা জানিয়েছে, এসব এলাকায় ক্রমাগত বসতি সম্প্রসারণের ফলে কৃষিজমি হারাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা, যাদের জীবিকা মূলত কৃষিনির্ভর। ফলে তাদের অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকা সরাসরি হুমকির মুখে পড়ছে। উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালে দখলকৃত অঞ্চলে নির্মিত ইসরায়েলি বসতি আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ এবং এগুলো একটি কার্যকর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনে প্রধান বাধা হিসেবে বিবেচিত। এদিকে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গঠিতব্য আন্তর্জাতিক বাহিনীতে সৈন্য পাঠানোর সম্ভাব্য দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান, আজারবাইজান ও ইন্দোনেশিয়ার নাম সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে পলিটিকো।
যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা এবং সাবেক এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই তিন দেশকে সৈন্য সরবরাহের শীর্ষ প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে, যদিও এখনো কোনো দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে অংশগ্রহণে সম্মতি জানায়নি। এর আগে বুধবার সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক উপদেষ্টা জানান, ইন্দোনেশিয়া ও আজারবাইজানের পাশাপাশি মিসর, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও (ইউএই) গাজায় আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীতে (ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স) সৈন্য পাঠাতে পারে। -এএফপি
ইন্দোনেশিয়াই এখন পর্যন্ত একমাত্র দেশ, যারা প্রকাশ্যে সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। দেশটি জানিয়েছে, জাতিসংঘের অনুমোদনে শান্তিরক্ষী মিশনের আওতায় তারা ২০ হাজার সেনা পাঠাতে প্রস্তুত। তবে ট্রাম্পের পরিকল্পনায় জাতিসংঘের কোনো ভূমিকা বা ম্যান্ডেটের উল্লেখ নেই। তথ্যের উৎস না জানিয়ে পলিটিকো আরও জানিয়েছে যে, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসরের সেনারা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে একটি সামরিক ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের সঙ্গে অবস্থান করবে, যাতে যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করা যায়। পলিটিকোর প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, হামাসকে নিরস্ত্র করাই এখন মার্কিন পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপ। সাবেক বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তা ড্যানিয়েল শাপিরো মনে করেন, এখনই আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীর কাঠামো নির্ধারণ ও সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারী দেশগুলোকে সামনে আনা যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দিতে সহায়ক হবে। -এএফপি