পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও পাকিস্তানের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় উ™ভূত যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্ব শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। গতকাল ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো।
ভারত-পাকিস্তানের নিকটপ্রতিবেশী চীন উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ভারত ও পাকিস্তানকে শান্ত থাকতে বলেছে। লজ্জাজনক অবস্থার কথা উল্লেখ করে দ্রুত সমাধান প্রত্যাশা করেছেন পরাক্রমশালী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ সামরিক সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। এজন্য সহায়তা করতে চায় যুক্তরাজ্য। কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে ভারত-পাকিস্তানের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থানের ঘোষণা করা হয়েছে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা ঘিরে উত্তেজনার জেরে গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অন্তত আটটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চালিয়েছে ভারত। জবাবে ভারতের আকাশেই দেশটির পাঁচটি বিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তান। পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যকার সংঘাতকে ঘিরে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থাগুলো। তারা উভয় দেশকেই সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, তুরস্ক, জাপান, ইরান, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
ভারত-পাকিস্তানের পরিস্থিতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাতের ভার বিশ্ব বহন করতে পারবে না। গতকাল জাতিসংঘ মহাসচিবের এক মুখপাত্র বলেন, নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্তে ভারতের সামরিক অভিযানের বিষয়ে মহাসচিব খুবই উদ্বিগ্ন। তিনি দুই দেশকে সামরিক দিক থেকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ভারত ও পাকিস্তানের পরিস্থিতিতে দুঃখ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে উভয় দেশেরই বৃহত্তম প্রতিবেশী চীন। পাশাপাশি দুই পরমাণু শক্তিধর দেশকেই শান্ত ও সংযত থাকার আহ্বানও জানায় দেশটি। গতকাল চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। ভারত ও পাকিস্তান এমন দুই প্রতিবেশী, যাদের আলাদা করা যায় না এবং তারা চীনেরও প্রতিবেশী। চীন সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে। তবে আমরা দুই দেশকেই শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানাই। পাশাপাশি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ভারত-পাকিস্তানের বর্তমান উত্তেজনা কমাতে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে চায় চীন। এ ক্ষেত্রে চীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক। পাকিস্তানে ভারতের হামলাকে লজ্জাজনক হিসেবে অভিহিত করেছেন পরাক্রমশালী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি এ উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দ্রুত শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এটি লজ্জাজনক। ভারত ও পাকিস্তান বহু দশক ধরে লড়াই করছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি এ পরিস্থিতি শেষ হবে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান পরিস্থিতিকে যুক্তরাষ্ট্র নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে তিনি জানান, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পরিস্থিতিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করি, এ পরিস্থিতি দ্রুত শেষ হবে। ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃত্ব একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে যাবে। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভারত ও পাকিস্তানকে দায়িত্বপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস। নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার এ উত্তেজনা একটি চলমান পরিস্থিতি। এ বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর দেশ দুটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একাধিক পর্যায়ে যোগাযোগ করে যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে সহায়তা দিতে প্রস্তুত দেশটি। গতকাল যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডস বলেন, দেশ দুটি দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতায় জড়িয়েছে। আমরা উভয় দেশের বন্ধু ও অংশীদার। আমরা দুই পক্ষকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত। উভয় দেশেরই আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, সংলাপ ও উত্তেজনা প্রশমনে গভীর স্বার্থ জড়িত। আর আমরা সেই লক্ষ্যে যা কিছু করা সম্ভব, তা করতে প্রস্তুত রয়েছি। কূটনৈতিক উপায়ে উত্তেজনা নিরসনের কথা বলেছে রাশিয়া। গতকাল দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত ও পাকিস্তানে সামরিক সংঘাত বৃদ্ধিতে রাশিয়া উদ্বিগ্ন। পরিস্থিতির যাতে আরও অবনতি না হয়, সে জন্য দুই পক্ষকেই সংযম দেখানোর অনুরোধ করছি। শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিক উপায়ে উত্তেজনা নিরসন করা সম্ভব। পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে জাপান। দেশটির মুখ্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি পাল্টাপাল্টি প্রতিশোধমূলক হামলার দিকে গড়াতে পারে এবং তা পূর্ণ মাত্রার সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারত ও পাকিস্তান যেন সংযম প্রদর্শন করে এবং সংলাপের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করে। ভারত ও পাকিস্তানকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্সও। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারো বলেন, সন্ত্রাসী হামলা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ভারতের অভিপ্রায়ের বিষয়টি আমরা বুঝি। তবে উত্তেজনা যাতে আর না বাড়ে এবং নিজ নিজ দেশের বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই সংযম অনুশীলন করার আহ্বান জানাই। এ ছাড়া পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় ভারতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে ইসরায়েল ও পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে ন্যাটোভুক্ত মুসলিম দেশ তুরস্ক। গতকাল এক্স হ্যান্ডেলে ভারতে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রুভেন আজার জানান, ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে ইসরায়েল। সন্ত্রাসীদের জানা উচিত, নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ করে পার পেয়ে তাদের লুকানোর কোনো জায়গা নেই। অন্যদিকে পাকিস্তানে হামলার নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপকালে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেন, এসব হামলায় বেসামরিক নাগরিক ও বেসামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করা হয়েছে। ভারতের এই উসকানিমূলক পদক্ষেপ সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বার উন্মুক্ত করেছে।