বকেয়া বেতন-বোনাসসহ বিভিন্ন দাবিতে চট্টগ্রাম, সাভার ও গাজীপুরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন পোশাককর্মীরা। তাদের একটি অংশ তিন মাসের বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস, মাতৃত্বকালীন ছুটির টাকা এবং সার্ভিস বেনিফিটের দাবিতে রাজধানীর সচিবালয় ঘেরাও করতে এলে পুলিশের বাধায় পিছু হটে যায়। তবে এ সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষে প্রায় ৪০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব ও সচিবালয়ের লিঙ্ক রোডের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ায় শেল নিক্ষেপ করলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে সচিবালয়ের সামনে থেকে চলে যায়।
এ ছাড়া টানা তিন দিন ধরে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন পোশাক শ্রমিকরা। সোমবার তারা নয়াপল্টনের সামনে সড়ক অবরোধ করলেও গতকাল তারা শ্রম ভবন থেকে সচিবালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে যান। বিজয়নগরের সামনে পুলিশ তাদের প্রথমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও সেই বাধা উপেক্ষা করে তারা সামনে এগিয়ে যান। পরে পল্টন পার হয়ে তোপখানা রোডে প্রবেশ করতে চাইলে আবারও পুলিশ তাদের বাধা দেয়, যা পরে সংঘর্ষে রূপ নেয়।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। বেতন-বোনাস না পেলে ঈদের দিন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। পুলিশ বলছে, শ্রমিকদের হামলায় আমাদের পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তারা রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এদের মধ্যে ফজলে রাব্বি নামে এক সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন।
এদিকে গতকাল সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ২৭ মার্চের মধ্যে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার কথা। কিন্তু ১২টি কারখানা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারছে না বলে জানিয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি কারখানায় অসন্তোষ চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারছে না তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আমরা শ্রম আইন অনুযায়ী এদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেব।
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড এলাকার জেএমএস গার্মেন্টস কারখানার বেতন-বোনাসের দাবিতে ১২ ঘণ্টা ধরে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। অবশেষে গত সোমবার রাতে আশ্বাস পেলে শ্রমিকরা সড়ক ছাড়েন। গত সোমবার রাত ১২টার দিকে ইপিজেড থানার ফ্রিপোর্ট মোড় থেকে সরে যান কারখানার শ্রমিকরা। এতে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয় যান চলাচল।
সাভার প্রতিনিধি জানান, সাভারের হেমায়েতপুরে কারখানা বন্ধের ঘোষণায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে জিন্স ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির শ্রমিকরা হেমায়েতপুর-সিংগাইর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শ্রমিকরা সেনাবাহিনীর সদস্যদের অনুরোধে সড়কের পাশে অবস্থান নেন। আন্দোলনরত শ্রমিকরা বলেন, ঈদে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের জন্য ৮ দিন ছুটি ঘোষণা করে। এর মধ্যে সরকারি ছুটি ছাড়া বাকিগুলো শ্রমিকদের অর্জিত এবং জেনারেল ডিউটির মাধ্যমে সমন্বয় করার কথা বলা হয়েছে।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে তিন মাসের বকেয়া বেতন ও ঈদের বোনাসের দাবিতে একটি কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ করেছে। এ সময় শ্রমিকরা প্রায় এক ঘণ্টা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে যৌথ বাহিনীর হস্তক্ষেপে শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে যান।