সুপারস্টার মানে দর্শকের মনের গভীরে স্থান গড়ে নেওয়া। কাজের দক্ষতা দিয়ে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যাওয়া। ঢাকাই চলচ্চিত্রে শীর্ষ কজন অভিনেতা তাঁদের অনবদ্য কাজ দিয়ে সহজেই এ জনপ্রিয়তা বা সুপারস্টারের তকমা লাভ করেন। এর মধ্যে চারজনের কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
‘লাঠিয়াল’-এ অনবদ্য আকবর পাঠান ফারুক
চলচ্চিত্রকার ফারুক। একাধারে অভিনেতা, প্রযোজক ও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্র সংগঠনের কর্মকর্তা। কয়েকটি সিনেমা হলের কর্ণধারও তিনি। ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর অভিষেক ঘটে। ১৯৭৫ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘লাঠিয়াল’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয় করে একদিকে তিনি সুপারস্টার অন্যদিকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর সুজন সখী, নয়নমণি, সারেং বৌ, গোলাপী এখন ট্রেনে, সাহেব, কথা দিলাম, সীমার, দিন যায় কথা থাকে, মিয়াভাইসহ দেড় শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বঅভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০১৬ সালে আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে সফল ও সেরা নায়কদের একজন হিসেবে স্বীকৃত।
‘জিঞ্জির’-এ সুপারহিট আলমগীর
আলমগীর। চলচ্চিত্রে অভিষেক ১৯৭৩ সালে আলমগীর কুমকুম পরিচালিত ‘আমার জন্মভূমি’ ছবির মাধ্যমে।
১৯৭৮ সালে দিলীপ বিশ্বাসের ‘জিঞ্জির’ চলচ্চিত্রে দক্ষ অভিনয় করেই তিনি সুপারস্টারের তকমা লাভ করেন। দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজক, গায়ক ও পরিচালক হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। ১৯৮৫ সালে ‘নিষ্পাপ’ চলচ্চিত্র দিয়ে তাঁর পরিচালনায় অভিষেক। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা বিভাগে ৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। ২০১৭ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা লাভ করেন তিনি। আলমগীরের সর্বশেষ নির্মিত ছবি ‘একটি সিনেমার গল্প’ একাধিক শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। তাঁর নির্মিত কয়েকটি ছবি কলকাতায় রিমেক করা হয়। অভিনেতা এবং উভয় ক্ষেত্রেই সমান জনপ্রিয় আলমগীর।
‘বেহুলা’য় দর্শকপ্রিয় নায়করাজ রাজ্জাক
চলচ্চিত্রকার রাজ্জাক। ১৯৬৬ সালে জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘লখীন্দর’-এর ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমে ঢাকাই চলচ্চিত্রে নিজের একটি উচ্চ আসন গড়ে নেন। পাঁচ দশকে অভিনেতা ও নির্মাতা হিসেবে তাঁর অনন্য আসন কেউ টলাতে পারেনি। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র সাংবাদিক আহমদ জামান চৌধুরী তাঁর দক্ষ চলচ্চিত্র জীবনের কারণে তাঁকে ‘নায়করাজ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ৩০০-এরও অধিক বাংলা ও উর্দু ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রায় দুই ডজন চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনা করেন তিনি। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার সংস্কৃতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য তাঁকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। পাঁচবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৩ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয় নায়করাজ রাজ্জাককে। কলকাতার বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেও দর্শকপ্রিয়তা পান তিনি।
‘মাসুদ রানা’ দিয়েই জনপ্রিয় সোহেল রানা
মাসুদ পারভেজ। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক। তিনি চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন সোহেল রানা নাম ধারণ করে। ১৯৭২ সালে মাসুদ পারভেজ নামে চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন। বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ ছবির প্রযোজক হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে অভিষেক ঘটে তাঁর। ছবিটি পরিচালনা করেন চাষী নজরুল ইসলাম। ১৯৭৩ সালে সোহেল রানা নাম ধারণ করে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিখ্যাত কাল্পনিক চরিত্র ‘মাসুদ রানা’র গল্প অবলম্বনে ‘মাসুদ রানা’ শিরোনামে নির্মিত ছবির নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ তাঁর এবং এ ছবির মাধ্যমে মাসুদ পারভেজ নামে পরিচালক হিসেবেও যাত্রা শুরু করেন তিনি। মূলত ‘মাসুদ রানা’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের কারণে প্রথম ছবিতেই তিনি সুপারস্টার খ্যাতি পান। চলচ্চিত্রশিল্পে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তিনি তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। বিভিন্ন চলচ্চিত্র সংগঠনের কর্মকর্তার দায়িত্বও পালন করেন তিনি।