গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হাজিরহাট, ওপারে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা। মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে করতোয়া নদী। দুই জেলার সীমান্তবর্তী দুই পাড়ের অন্তত ৪০ গ্রামের মানুষের বর্ষা মৌসুমে নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা নৌকা। শুকনো মৌসুমে চলাচলের জন্য ব্যবহার করা হয় বাঁশের সাঁকো। এখানে একটি ব্রিজের অভাবে এলাকার স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছাত্রছাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। সরেজমিন দেখা গেছে, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে হাজিরহাট এলাকায় করতোয়া নদীর এ ঘাট। এটি ৫০ থেকে ৬০ বছরের পুরোনো। এপারে মুংলিশপুর, পালপাড়া, শীলপাড়া, গণকপাড়া, হাসানখোর, রামচন্দ্রপুর, জাইতর, কেশবপুর, গণেশপুর, কাশিয়াবাড়ী, চকবালা, সগুনা, বড় শিমুলতলা, পশ্চিম মির্জাপুর, কিশোরগাড়ী গ্রাম ও ওপারে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছাত্রছাত্রী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, এনজিওকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ করতোয়া নদী পারাপার হচ্ছেন নৌকায়। এলাকার কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া করা হয় এ ঘাট দিয়েই। জানা যায়, দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছরে অনেক জনপ্রতিনিধি করতোয়া নদীর হাজিরঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণ করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। স্থানীয়রা জানান, বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিনিয়ত অসংখ্য ছাত্রছাত্রী, কৃষক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জীবনের ঝুঁঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এ ঘাট দিয়ে নৌকায় বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত ভ্যান পারাপার সম্ভব হয়। অন্য কোনো যানবাহন চলাচল সম্ভব হয় না। এতে কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। একটি ব্রিজের অভাবে যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে এ ভোগান্তি। সাধারণ মানুষের দাবি এ হাজিরঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে অল্প সময়ে পলাশবাড়ী-ঘোড়াঘাটসহ এ এলাকার হাজারো মানুষের যাতায়াত সহজ হবে। কৃষক আমজাদ আলী বলেন, কৃষি কাজ করে মা, স্ত্রী, ছেলেমেয়েসহ পাঁচ জনের সংসার চালাতে হয়। ফসল বিভিন্ন হাটবাজারে নিয়ে বিক্রি করি, কিন্তু ব্রিজ না থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়। আরেক কৃষক আবদুর রহমান বলেন, এখানে ব্রিজ না থাকায় কৃষিপণ্য আনা-নেওয়ায় খুব সমস্যা হয়। বর্ষা মৌসুমে বস্তা ঘাড়ে করে নিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। স্থানীয় এক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া রাব্বি হাসান জানায়, বর্ষা মৌসুমে প্যান্ট গুটিয়ে নৌকায় উঠতে হয়, পানি বেশি হলে বা গর্তে পড়ে মাঝে-মধ্যেই ভিজে যায় প্যান্ট-শার্ট। বাধ্য হয়ে ভেজা কাপড়েই স্কুলে যেতে হয়। স্থানীয় রিপন চন্দ্র জানান, বর্ষাকালে নৌকায় নদী পারাপার অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে একটি সেতু হলে আর সমস্যা থাকবে না। আমরা কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল আলম বলেন, জনদুর্ভোগের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। হাজিরঘাট পরিদর্শন করে ব্রিজ নির্মাণের বিষয়টি যাচাই করব। প্রয়োজনে জেলা প্রশাসকের সহায়তা নেব যাতে ব্রিজ নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।