হবিগঞ্জ জেলায় রয়েছে ২৪টি ছোট-বড় চা-বাগান। বছরের এ সময়ে চা- বাগানগুলোয় সবুজের গালিচা থাকার কথা। সেখানে এখন যতদূর চোখ যায় দেখা যায় প্রাণহীন পরিবেশ। গাছে নেই নতুন পাতা। যেগুলো আছে প্রখর রোদে পুড়ে যাচ্ছে। বাগানের ভিতর লেক ও ছড়াতেও পানি নেই। তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। গাছ রক্ষায় চা শ্রমিকদের অনেককে বাগানে কলসিতে করে পানি এনে ঢালতে দেখা গেছে। এ ছাড়াও দীর্ঘদিন বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় চা গাছগুলোতে মশা ও পোকামাকড়ের বাসা বেঁধেছে। বলা চলে চা-বাগানে চলছে করুণ দশা। এ অবস্থায় এবার চা উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় অন্তত ২৪টি চা-বাগান রয়েছে। যার আয়তন ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৩২৪ হেক্টর। প্রতি হেক্টর জমিতে ২০০ থেকে ২৫০ কেজি চা-পাতা উৎপাদন হয়। প্রতি বছর মার্চ মাস থেকে শুরু হয় চা-পাতা তোলা। চলতি বছরে এ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়নি। এর প্রভাবে চা গাছে নতুন পাতা তেমন বের হয়নি। তারা বলছেন, গত বছর এ সময়ের তুলনায় চলতি বছর চা উৎপাদন কম হয়েছে ৮০ শতাংশের মতো। জেলার চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলার কয়েকটি চা-বাগান ঘুরে দেখা গেছে, ছড়া ও লেকে পানি না থাকায় শ্রমিকরা দূরদূরান্ত থেকে কলসিতে পানি এনে গাছের গোড়ায় দিচ্ছেন। প্রখর রোদে পুড়ে যাওয়া চা গাছগুলোতে তারা এই পানি ঢালছেন।
চা-শ্রমিকরা জানান, ‘বাগানে কাজ করেই আমাদের সংসার চলে। এখন কেউ কেউ বাগানে কাজ না করে বাইরে বস্তি ও শহরে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। চা গাছে পাতা না আসলে আমাদের কপালে দুঃখ আছে’। প্রতি বছরে মার্চ মাস আসলে আমরা দিনভর চা-পাতা তুলি। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় চা-পাতা বের হয়নি। এ কারণে আমাদের কাজ ও মজুরি কমে গেছে। আমরা গোসল-খাওয়ার পানিও পাচ্ছি না। চা-পাতা না তুললে বাগান কর্তৃপক্ষও মজুরি দেবে না।’ এমন অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের অবস্থা খারাপ হবে। চুনারুঘাট উপজেলার নালুয়া চা-বাগানের ব্যবস্থাপক ইফতেখার এনাম জানান, ‘গত বছরের মার্চে এ বাগানে চা উৎপাদন হয়েছিল ২৫ হাজার কেজি। এবার মাত্র ৫ হাজার কেজি হয়েছে। সামনের দিনে এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।’ মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া চা-বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক সোহাগ আহমেদ জানান, ‘২০২৪ সালে তীব্র খরা ও শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা কারণে বাগানগুলোতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চা-পাতা উৎপাদন কম হয়। চলতি বছর বৃষ্টি না হলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। শ্রমিকরা কলসিতে করে পানি সংগ্রহ করে বাগানে দিচ্ছে। বিশাল বাগান, কৃত্রিম পানি দিয়ে পোষানো সম্ভব নয়।’ বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) লস্করপুর ভ্যালির ক্লাব চেয়ারম্যান কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘এখন যদি বৃষ্টি হয়ও তা হলেও যে ক্ষতি হয়েছে তা পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা যাবে না। বৃষ্টি হলেও অন্তত দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে গাছ পুরোপুরি আগের অবস্থানে ফিরতে।’