রাষ্ট্রের নাম, মূলনীতি, সংসদের মেয়াদ এবং ভোটার ও প্রার্থীর বয়স কমানোর প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ। বাসদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ দুইবারের বেশি নয় ও কর্তৃত্ব যুক্তিসঙ্গত করা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান প্রবর্তনের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের এলইডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে লিখিত মতামত জমা দেন বাসদ নেতৃবৃন্দ। এ সময় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, সম্পাদকম লীর সদস্য নিখিল দাস এবং সদস্য জুলফিকার আলী ও প্রকৌশলী শম্পা বসু।
বাসদ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সংবিধানের দ্বিতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, অষ্টমসহ অগণতান্ত্রিক সব সংশোধনী ও নিবর্তনমূলক সব কালাকানুন বাতিল চেয়েছি। রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ বহাল রাখতে বলেছি। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী প্রয়োজন। তিনি বলেন, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো বা ভিত্তি, মূলনীতি পরিবর্তন করা যাবে না এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি কোনো আইন সংসদের সব সদস্য মিলে একমত হলেও করা যাবে না। প্রদেশ সৃষ্টি করার প্রস্তাবের প্রয়োজনীয়তা নেই এবং তা রাষ্ট্রে আঞ্চলিকতার সংকট ও আস্থাহীনতা বাড়িয়ে তুলবে।
এই মুহূর্তে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান জরুরি বলে মন্তব্য করেন বজলুর রশীদ। তিনি বলেন, গণপরিষদ ও সংবিধান সংস্কার সভাসহ স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারগুলোর বিষয়ে নির্বাচিত সংসদ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তিনি বলেন, কালো টাকা, ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ, ঋণ খেলাপি, অর্থ পাচারকারী ও দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার বিধান কার্যকর করতে আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। বাসদ সাধারণ সম্পাদক বলেন, কমিশনের সুপারিশে পাকিস্তান আন্দোলনের ইতিহাস অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ’২৪-এর গণ অভ্যুত্থানকে সমান্তরাল দেখানোর বা কোনো ক্ষেত্রে ’৭১ কে ’২৪ দিয়ে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে বলে জনসাধারণের কাছে প্রতীয়মান হতে পারে। ’২৪-এর গণ অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, আত্মত্যাগ, ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ ১৫ বছরের সংগ্রাম ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধানের শেষে এনেক্স হিসেবে যুক্ত থাকতে পারে। সংস্কার কমিশনগুলো যেসব সুপারিশ দিয়েছে তা নিয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনার মাধ্যমে গৃহীত পদক্ষেপ গণতান্ত্রিক অধিকার বিকশিত করার পক্ষে সহায়ক হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।