চাকরি, উচ্চশিক্ষা, স্কলারশিপ বা ইন্টার্নশিপ যে কোনো আবেদনে চাওয়া হয় কারিকুলাম ভিটা বা সিভি। অনেকে একে আবার বায়োডাটা বা জীবনবৃত্তান্তও বলে থাকেন। আপনার পরিচয়, লেখাপড়া, কাজের অভিজ্ঞতা, বিশেষ কৃতিত্ব (পুরস্কার ইত্যাদি) এবং যোগাযোগ- এগুলো থাকতেই হবে সিভিতে।
তাই এটি হওয়া চাই ঝকঝকে, বুদ্ধিদীপ্ত, তাতে থাকা চাই নিজস্বতার ছাপ। সিভি হচ্ছে একজন ব্যক্তির শিক্ষা ও চাকরিজীবনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সারাংশ। এটি মূলত চাকরির ক্ষেত্রে ব্যবহূত হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে অন্য অনেক ক্ষেত্রেই সিভির ব্যবহার বেড়ে চলেছে। যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অফিসিয়াল ভাষা ইংরেজি, তাই এটি সাধারণত ইংরেজিতেই লেখা হয়ে থাকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে বাংলায়ও লেখা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে চাকরিজীবনের অনেক ক্ষেত্রেই সিভি অনেক জরুরি একটা বিষয়। বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে এটির গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে চাকরির যে পরিমাণ চাহিদা সে তুলনায় চাকরির খাত অনেক কম। এ জন্য বেশ ভালো রকমের প্রতিযোগিতা করেই একজনকে চাকরি পেতে হয়। এ ক্ষেত্রে একটি মানসম্মত সিভি এই প্রতিযোগিতায় আপনাকে অনেকটাই এগিয়ে রাখতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরপরই সিভি তৈরির কৌশলগুলো আয়ত্ত করা উচিত। নিজের সিভি নিজেকেই তৈরি করা জানতে হবে। অন্য কেউ এটি তৈরি করে দিলে হয়তো পরে চাকরিজীবনে আপনি সেই দক্ষতা আর অর্জন করতে পারবেন না। প্রশ্ন আসতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতেই তো আমি চাকরির আবেদন করতে যাচ্ছি না, তাহলে কেন সিভি তৈরি করে রাখব? চাকরি ছাড়াও কিন্তু অনেক ধরনের সুযোগ আপনার সামনে আসতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্মেলন, কর্মশালা, নানা ধরনের কর্মসূচিতে অংশ নিতে গেলে সিভি দরকার হয়। এ ছাড়া খণ্ডকালীন চাকরির কোনো সুযোগও তৈরি হয়ে যেতে পারে।
জীবনবৃত্তান্তের বিভিন্ন অংশ
একটি জীবনবৃত্তান্তে যে তথ্যগুলো উপস্থাপন করবেন
-শিরোনাম (Title)
- সারসংক্ষেপ (Career Summary) - অভিজ্ঞতা সম্পন্নদের জন্য বেশি প্রয়োজন।
- ক্যারিয়ার উদ্দেশ্য (Career objective) - সদ্য পাস করা চাকরি প্রার্থীদের জন্য।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা (Education)
- অতিরিক্ত তথ্য (Additional Information)
- ব্যক্তিগত তথ্য (Personal Information)
- রেফারেন্স (Reference)
নাম ও যোগাযোগ
সিভির প্রথম অংশে পুরো নাম লিখতে হবে। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্রে যে নাম লেখা আছে, তাই লিখতে হবে। ঠিকানা লেখার ক্ষেত্রে চিঠিতে যোগাযোগ করা যায়, এমন ঠিকানা স্পষ্ট কিন্তু সংক্ষিপ্ত আকারে লিখতে হবে। যোগাযোগের জন্য দিতে হবে মোবাইল ফোন নম্বর। আর বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে ই-মেইল ঠিকানার ক্ষেত্রে। নিজের নামের সঙ্গে মেলে এমন সংক্ষিপ্ত ই-মেইল ঠিকানা তৈরি করে সিভিতে ব্যবহার করতে হবে। লিঙ্কডইন প্রোফাইলের আইডি ব্যবহার করতে পারেন। প্রয়োজন না হলে ফেসবুক আইডি যুক্ত না করাই শ্রেয়।
ছবি
সিভিতে যে ছবি যুক্ত করবেন, তা যেন সাম্প্রতিক তোলা হয়। চেহারা বোঝা যায় এমন যে কোনো ছবি ব্যবহার করতে পারেন।
পেশাগত লক্ষ্য
সিভিতে অবশ্যই আপনার পেশাগত লক্ষ্য লিখতে হবে। ভাষা হবে সংক্ষিপ্ত ও প্রাঞ্জল, গোছানো ভাষায়। যদি ইংরেজিতে লেখেন, বানান বা ব্যাকরণ যেন ভুল না হয়। যে পদে আবেদন করবেন, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত লক্ষ্য লিখতে হবে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
যখন শিক্ষাগত যোগ্যতা লিখছেন, তখন সম্প্রতি যে পরীক্ষায় পাস করেছেন, সেটা দিয়ে শুরু করে ক্রমপর্যায়ে বোর্ডের পরীক্ষা পর্যন্ত লিখুন। ভালো হয়, এগুলোকে একেকটা বুলেট পয়েন্ট করে লিখলে। বৃত্তি, পুরস্কার বা শিক্ষাগত কোনো সম্মান পেয়ে থাকলে সেটা দিতে ভুলবেন না। আবার কোথাও কোনো সেমিনার বা ওয়ার্কশপে যোগ দিয়ে কোনো সার্টিফিকেট পেয়ে থাকলে সেটার প্রাসঙ্গিক তথ্যও উল্লেখ করুন। লেখার সময় কেবল প্রতিষ্ঠান, ডিগ্রি এবং প্রাপ্ত নম্বর লেখা যথেষ্ট নাও হতে পারে। কোন কোন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন, তা উল্লেখ করা যদি প্রাসঙ্গিক হয়, অবশ্যই লিখতে হবে।
কম্পিউটার দক্ষতা
কাজের অভিজ্ঞতার পর এটিই বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে পরিগণিত হয়। কম্পিউটারের দক্ষতা এখন প্রতিটি চাকরির ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি অফিসের সব কাজই এখন মূলত কম্পিউটার-নির্ভর। তাই এ বিষয়ক যে যে দক্ষতা আছে আপনার, সবই সংক্ষেপে তুলে ধরবেন। যে পদের জন্য সিভি তৈরি করছেন, সেই পদের কথা মাথায় রেখে কম্পিউটার দক্ষতা লিখতে হবে। এখন সব পর্যায়ের চাকরির জন্য মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ারপয়েন্ট জানাকে সাধারণ দক্ষতা হিসেবে ভাবা হয়। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ারপয়েন্টের কাজ খুব ভালো জানলে তা অবশ্যই সিভিতে যুক্ত করবেন।
ভাষাগত দক্ষতা
আপনার কোন কোন ভাষার ওপর দখল আছে, তা সুন্দরভাবে তুলে ধরতে হবে। বাংলা ও ইংরেজি এ ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক আপনি যদি বাংলাদেশে চাকরি করতে চান। এ ছাড়াও কিছু কিছু নির্দিষ্ট চাকরির ক্ষেত্রে অন্য কোনো ভাষা জানা পূর্বশর্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেগুলো যুক্ত করতে হবে।
রেফারেন্স
খেয়াল রাখবেন, রেফারেন্স অংশে আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দের নাম উল্লেখ করবেন না। আপনাকে আপনার ছাত্রজীবন বা কর্মজীবনে কাছ থেকে দেখেছে এমন ব্যক্তিকেই আপনি রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করবেন। অবশ্যই যাঁদের রেফারেন্স দেবেন তাঁদের ফোন নম্বর, ঠিকানা এবং ই-মেইল (যদি থাকে) উল্লেখ করবেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যাপারের দিকে খেয়াল রাখতে হবে তা হচ্ছে, আপনি যাঁদের রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করেছেন সেসব ব্যক্তিকে আপনার আগে থেকে জানাতে হবে যে, আপনি তাঁদের নাম আপনার জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখ করেছেন। এসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি আপনার বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কলেজের কোনো শিক্ষকের নাম উল্লেখ করেন; যিনি আপনাকে খুব ভালোভাবে চেনেন।
স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ
আপনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যে কাজ বা সংগঠনে যুক্ত তার তথ্য লিখতে হবে। কত দিন ধরে কাজ করছেন, কোন পদে কাজ করছেন তা লিখুন। প্রয়োজন হলে প্রতিটি কাজের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কাজের বর্ণনা দিন।
মনে রাখা জরুরি
এ-ফোর আকারের কাগজের মাপে সিভি তৈরি করতে হবে। চারপাশে ১ ইঞ্চি পরিমাণ 'মার্জিন' রাখতে হবে। সাদা কাগজে কালো কালিতে তথ্যগুলো লেখা থাকবে। সিভির পটভূমিতে অন্য কোনো রং ব্যবহার না করাই ভালো। সাধারণত সিভি ওয়ার্ড ফরম্যাটেই লেখা হয়। কারণ অধিকাংশ জায়গায়ই প্রিন্ট আউট জমা দেওয়া হয়। তবে সিভির সফট ফাইলও রাখবেন। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান ই-মেইলের মাধ্যমে সিভি পাঠাতে বলে।
বিডি প্রতিদিন/আশিক