পলিথিন, বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনার স্তূপে বদ্ধ হয়েছিল বাউনিয়া খাল। সরু নালার মতো গড়িয়ে যেত পানি। খালে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে শুরু হয়েছে উদ্ধার কার্যক্রম। প্রাণ ফিরছে খালে। বাউনিয়া খালের মতো পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে রাজধানীর ১৯টি খালে নেওয়া হয়েছে খাল উদ্ধার কার্যক্রম।
দুই সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মোট ১৯টি খালের সংস্কার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এ কর্মসূচিকে বলা হচ্ছে ‘ব্লু-নেটওয়ার্ক’। প্রথম ধাপে ছয়টি খাল সংস্কার করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা উত্তরের আওতাধীন চারটি খাল (বাউনিয়া, কড়াইল, রূপনগর ও বেগুনবাড়ী) এবং ঢাকা দক্ষিণের আওতাধীন দুটি খাল (মান্ডা ও কালুনগর)। কর্মসূচির আওতায় পর্যায়ক্রমে অন্য খালের সংস্কার কাজ করা হবে।
সরেজমিন বাউনিয়া খালে গিয়ে দেখা যায়, খাল থেকে আবর্জনা তুলে পাশে সরিয়ে রাখা হয়েছে। আবর্জনার স্তূপে প্লাস্টিকের বোতল, ফ্রিজের ভাঙা অংশ, সোফার ফোম কী নেই। এসব ময়লা টেনে তোলায় বেশ খানিকটা প্রশস্ত হয়েছে খাল। বেড়েছে পানির প্রবাহ। ময়লা তুলে খালের পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। পাশে দাঁড়িয়ে খাল পরিষ্কার কার্যক্রম দেখছিলেন এই এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা। এই এলাকার আফজাল হোসেন বলেন, ময়লা-আবর্জনায় মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছিল খাল। দুর্গন্ধে নাকে কাপড় চেপে যাতায়াত করতে হতো খাল পাড় দিয়ে। মশার আবাসস্থল হয়ে উঠেছিল খাল। খাল খনন করার ফলে এখন চেহারা বদলে গিয়েছে। বৃষ্টি হলে পানির রংও পরিষ্কার হয়ে যাবে।
রাজধানীর উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর ও হরিরামপুরের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া খালটির নাম খিদির খাল। দখল আর দূষণের কবলে পড়ে উত্তরার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘ এ খালটি মৃতপ্রায়। দীর্ঘ ৮ কিলোমিটারের এ খালটি তুরাগ নদ থেকে উৎপত্তি হয়ে হরিরামপুরের রানাভোলা, ফুলবাড়িয়া, উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর খালপাড়, দলিপাড়া, বাউনিয়া, মিরপুর আলোকদি হয়ে আবার তুরাগ নদে গিয়ে মিশেছে। অসাধু চক্রের দখল, দূষণে ছোট নালায় পরিণত হয়েছিল। উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টর অংশে লেকের উত্তর প্রান্ত ময়লা ফেলে খালকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ১০ নম্বর সেক্টরের দক্ষিণ পাশ দিয়ে বহমান খালটি পুরোপুরি নর্দমায় পরিণত হয়েছিল। এই খালকে পুনরুজ্জীবিত করতে শুরু হয়েছে পুনঃখনন কার্যক্রম।
সরেজমিন দেখা যায়, মেশিনের সাহায্যে কচুরিপানা, আবর্জনা সরিয়ে আনা হচ্ছে। খুঁড়ে তুলে আনা হচ্ছে শক্ত হয়ে যাওয়া পলিথিনসহ মাটি। এতে ক্ষীণ হয়ে যাওয়া খাল বেড়েছে প্রশস্তে। খালে বইতে শুরু করেছে পানির ধারা। এ এলাকার বাসিন্দা সাব্বির হোসেন বলেন, সকালে হাঁটতে যাওয়ার সময় দেখতাম গভীর রাতে ট্রাকে করে ময়লা এনে ফেলে রেখে যাওয়া হতো খালে। অনেকে এসব জায়গায় বাসাবাড়ির ময়লাও ফেলতেন। এরকম ষড়যন্ত্র, অবহেলায় খাল প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। এখন উদ্ধার কার্যক্রমের কারণে খাল আসল চেহারায় ফিরতে শুরু করেছে। আমাদের দাবি আর যেন খাল দখল না হয় সেজন্য স্থায়ী ব্যবস্থা করা।
এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘এখন আর খাল দখল করার সুযোগ হবে না। এ জন্য এলাকাভিত্তিক কমিটি করে দেওয়া হচ্ছে। খাল উদ্ধার করে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। খাল দখল ঠেকাতে স্থায়ী সমাধানের জন্য খাল পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকায় যেসব ভৌত অবকাঠামো করা হয়েছে সেগুলো পরিকল্পনাবিহীন। ঢাকা সিটি পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঢালু। মাঝখানে তিমি মাছের পেটের মতো। খালগুলো সব পূর্ব-পশ্চিমমুখী। দরকার ছিল নর্দমা-জাল পূর্ব-পশ্চিমমুখী করা। জলবিদ্যা মেনে ঢাকার উন্নয়ন হয়নি।’