ঐক্য ন্যাপের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জননেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্যের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। সভায় বক্তারা বলেন, দেশ এখন এক গভীর সংকটময় পরিস্থিতি অতিক্রম করছে। এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উদ্ধার ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য প্রগতিশীল বাম রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। জননেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য আমৃত্যু এই ঐক্য গড়ার জন্য চেষ্টা করে গেছেন।
বৃহস্পতিবার ঐক্য ন্যাপের আয়োজনে বিকেল চারটায় রমনা উদ্যানের টেনিস ফেডারেশনের পাশে দলীয় কার্যালয়ের সামনের চত্বরে এই সভা আয়োজন করা হয়। সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আইনজীবী এম এ সবুর।
সভার শুরুতে প্রয়াত নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্যসহ ১৯৫০ সালে এই দিনে রাজশাহী কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ডে গুলিতে নিহত শহীদ নেতারা এবং সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সমবেত কণ্ঠে ‘আগুনের পরশমণি’ গানটি পরিবেশনের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তিগতভাবে অনেকে মঞ্চে রাখা পঙ্কজ ভট্টাচার্যের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সংগঠনগুলোর মধ্যে ছিল—ঐক্য ন্যাপ, সিপিবি, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী, কমরেড মণি সিংহ-ফরহাদ ট্রাস্ট, গণতান্ত্রিক পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ, বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, গণফোরাম ও যুব ইউনিয়ন। পরিবারের পক্ষে ছিলেন বহ্নিশিখা পুরকায়স্থ।
আলোচনা সভায় সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বাম শক্তির ঐক্য গড়ে তোলার আলোচনার মধ্যে না থেকে ঐক্য গড়ার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পরিস্থিতি এখন এমন যে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আর দেরি কারা উচিত নয়। পঙ্কজ ভট্টাচার্যের চরিত্রের একটি বড় গুণ ছিল একাগ্রতা। তাঁর মতো একাগ্র হয়ে কাজ করতে হবে।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, দেশে এখন এক সংকটময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যে পরিবর্তন হচ্ছে, তা সঠিক পথে যাচ্ছে কি না তার প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। এই সময় পঙ্কজ ভট্টাচার্যের মতো রাজনীতিকের বড় প্রয়োজন ছিল।
বাংলাদেশ জাসদ সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, পঙ্কজ ভট্টাচার্য ছিলেন এক ব্যতিক্রমী রাজনীতিক। রাজনৈতিক আদর্শ ছাড়াও তাঁর ব্যক্তিগত চারিত্রিক গুণাবলি মানুষকে আকৃষ্ট করত। কোথাও কোনো অন্যায় অবিচার দেখলে তিনি সেখানে প্রতিবাদ করতে ছুটে গেছেন। মানুষের প্রতি ছিল তাঁর গভীর মমত্ববোধ।
বাসদের সম্পাদক বজলুর রশিদ বলেন, শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য তিনি ব্যক্তিগত ভোগলিপ্সা ত্যাগ করেছেন। রাজনৈতিক আদর্শ ছাড়াও তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা ও গুণাবলি অনুসরণীয়।
মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, তরুণ প্রজন্মের কাছে পঙ্কজ ভট্টাচার্যদের মতো ত্যাগী নেতাদের আদর্শ ও ভূমিকার কথা তুলে ধরতে হবে। তরুণদের মধ্যে থেকে পরবর্তী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে এম এ সবুর বলেন, পঙ্কজ ভট্টাচার্যের অভাবে প্রগতিশীল বাম রাজনীতিতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, সেই অভাব ব্যক্তিগতভাবে পূরণ করার মতো এখন কেউ নেই। তবে সমষ্টিগতভাবে সেই অভাব পূরণ করা সম্ভব। শুধু তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষা, দেশে মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি ও প্রকৃতপক্ষে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্যই প্রগতিশীল বাম শক্তির ঐক্য এখন অতীব প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। এই ঐক্যের মধ্য দিয়েই তাঁর অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নিতে হবে।
আরও আলোচনা করেন গণতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সম্পাদক ডা. শহিদুল্লাহ শিকদার, সিবিপির প্রবীণ নেতা মনজুরুল আহসান খান, গণফোরাম সম্পাদক মিজানুর রহমান, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সম্পাদক পরিতোষ দেবনাথ, ঐক্য ন্যাপের সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক ও পরিবারের পক্ষে বহ্নিশিখা পুরকায়স্থ। সঞ্চালনা করেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা নাসিরউদ্দিন বাদল।