দেশের ১৩ জেলার ৭৭ উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ রয়েছে। বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এ তিন পার্বত্য জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মশার প্রজনন বৃদ্ধি এবং নতুন প্রজাতির আনাগোনা ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ আরও জটিল করে তুলছে।
এর মধ্যে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। এ বছরের ম্যালেরিয়া দিবসের প্রতিপাদ্য ‘আমরাই করব ম্যালেরিয়া নির্মূল : নব উদ্যমে, নব বিনিয়োগে ও নব চিন্তায়’। জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সূত্রে জানা যায়, গত বছর দেশে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৯৯ জন, মারা গেছে ছয়জন। উচ্চ ম্যালেরিয়াপ্রবণ তিন পার্বত্য জেলায় মোট ম্যালেরিয়া রোগীর ৯২ শতাংশ পাওয়া গেছে। ম্যালেরিয়া নির্মূলের আওতাধীন ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলের আট জেলায় স্থানীয় বাসিন্দা ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ৬। আট জেলার মধ্যে কুড়িগ্রাম, নেত্রকোনা, শেরপুর, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, সিলেট এ ছয় জেলার স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি। ২০০৮ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ম্যালেরিয়াজনিত অসুস্থতা শতকরা ৮৫ ভাগ এবং মৃত্যু শতকরা ৯৬ ভাগ কমেছে। জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির পক্ষ থেকে ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৬ মিলিয়নের বেশি দীর্ঘমেয়াদি কীটনাশকযুক্ত মশারি বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এর পরও নিয়ন্ত্রণে আসছে না ম্যালেরিয়া। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূল করতে চায় সরকার। দেশের ম্যালেরিয়া আক্রান্তের ৯০ শতাংশ পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দা। সেখানে এ রোগ বৃদ্ধির প্রবণতা সরকারের লক্ষ্যপূরণে বাধা হয়ে উঠতে পারে বলেই ধারণা সংশ্লিষ্টদের। ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির পেছনে তিনটি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন মাঠপর্যায়ের চিকিৎসক, কীটতত্ত্ববিদ ও গবেষকরা। পার্বত্য এলাকায় বিতরণ করা কীটনাশকযুক্ত মশারি মশা প্রতিরোধে কাজ করছে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকায় সংক্রমণ বেশি হওয়ার পরও প্রতিবেশী দেশগুলোর দিকে নজরদারির অভাব। প্রকৃতি, মশা ও মানুষের আচরণে পরিবর্তনেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না ম্যালেরিয়া। ম্যালেরিয়া আক্রান্ত নিয়ন্ত্রণে আনতে ২০২৩ সালে বান্দরবানের লামা উপজেলায় চারটি হটস্পট গ্রামে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে দুই কোর্স ম্যালেরিয়া প্রতিরোধক হিসেবে টিডিএ (টার্গেটেড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) খাওয়ানো হয়েছে। এ অভিজ্ঞতা থেকে গত বছর রাঙামাটির জুরাছড়ির ২৬ এবং বরকল উপজেলায় ৫ গ্রামে এ ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে। এ বছর বান্দরবানের ঝুঁকিপূর্ণ ৩৫ গ্রামে এ কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ছাড়া বান্দরবানের লামা এবং আলীকদমের ১০০ গ্রামে প্রায় ১২ হাজার জনগোষ্ঠীর মধ্যে ম্যালেরিয়ার টিকা প্রয়োগের কার্যক্রম চালু হয়েছে।