প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার প্রধান আসামি মেহরাজ ইসলামসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপরজন হলেন মো. মাহাথির হাসান। গতকাল গাইবান্ধা থেকে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় র্যাব-১ ও র্যাব-১৩ এর যৌথ অভিযানে মেহরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। চট্টগ্রামের হালিশহর থানার আজাদ টাওয়ার থেকে হালিশহর থানা পুলিশের সহযোগিতায় মাহাথিরকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ। পারভেজ হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি মেহরাজ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে পারভেজকে হত্যার ঘটনায় উসকানিদাতা সেই দুই তরুণীকে খুঁজে বের করতে বলেছেন আদালত। এ মামলায় গ্রেপ্তার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানার যুগ্ম সদস্যসচিব হৃদয় মিয়াজীর রিমান্ড শুনানিতে গতকাল এ আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. ছানাউল্যাহ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক এ এস এম মাঈন উদ্দিন এদিন হৃদয়কে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চান।
পরে বিচারক মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাস করেন, ‘মেয়েরা কোথায়? তাদের ধরেননি কেন?’ তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘এ মামলায় মেয়েদের সন্দেহ করার মতো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাইনি। সিসি ক্যামেরায় তাদের দেখা যায়নি। আবু জর পিয়াস নামে এক ছেলে সবকিছু অর্গানাইজ করেছে। আমরা তাকে খুঁজছি।’ এরপর বিচারক বলেন, ‘মামলার সঙ্গে মেয়েদের সংশ্লিষ্টতা আছে। তারা স্পটে ছিল, মেয়েগুলোর ভূমিকা ছিল। তাদের খুঁজে বের করুন।’ শুনানি শেষে আদালত সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে হৃদয় মিয়াজীকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
র?্যাব সদর দপ্তর বলছে, পারভেজ হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি মেহরাজ ইসলামকে গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মেহেরাজ প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির বিবিএর শিক্ষার্থী। তিনি বনানী এলাকার নুরুল ইসলাম সর্দারের ছেলে। বনানী থানা পুলিশ বলছে, পারভেজ হত্যা মামলার পরপরই ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পর্যালোচনা করে মহাখালী ওয়ারলেস গেট এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল পারভেজ হত্যা মামলার আরেক আসামি মাহাথিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার বিকালে প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির সামনে শিঙাড়া খাচ্ছিলেন দুই তরুণী। তাদের একজন প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির ছাত্র পিয়াসের বান্ধবী। তখন পারভেজ সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। তিনি কেন হাসলেন- এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পিয়াসের বান্ধবী। পরে পিয়াস, মেহরাজ ও মাহাথিরের সঙ্গে পারভেজদের বাগ্?বিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জেরে খুন হন পারভেজ। পারভেজ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকায়।
এ ঘটনায় নিহত পারভেজের মামাতো ভাই হুমায়ুন কবীর মামলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দুই নেতাসহ আটজনের নাম উল্লেখ এবং ২৫-৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, মেহরাজ ও তার সঙ্গীরা লাঠিসোঁটা, ছুরি-চাকু ও চাপাতি হাতে পারভেজের ওপর হামলা চালান। মেহরাজ ইসলাম তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে পারভেজের মৃত্যু নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে তার বুকের বাম পাশে সজোরে আঘাত করেন। মামলার পর গত রবিবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- মো. আল কামাল শেখ ওরফে কামাল, আলভী হোসেন জুনায়েদ এবং আল আমিন সানি। তাদের সবাইকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। গত মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানার যুগ্ম সদস্যসচিব হৃদয় মিয়াজীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গতকাল মেহরাজকে গ্রেপ্তার করে র্যাব এবং মাহাথিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের পরদিন রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পারভেজকে নিজেদের কর্মী দাবি করে এ হত্যাকাণ্ডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানীর কয়েকজন নেতার জড়িত থাকার অভিযোগ করে ছাত্রদল। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিজেদের ফেসবুক পেজে ছাত্রদলের এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, এ ঘটনায় তাদের নেতারা জড়িত নন; ছাত্রদল মিথ্যাচার করছে।