জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই- এই স্লোগান সামনে রেখে ১৭, ১৮ ফেব্রুয়ারি অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছে গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট জেলা বিএনপি। লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর ১৩০ কিলোমিটার চরাঞ্চলে প্রায় লক্ষাধিক পরিবারের বসবাস। আর এই তিস্তাকে ঘিরে চরাঞ্চলের মানুষের জীবিকা নির্ভর করে। উজানে পানি প্রত্যাহারের কারণে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীর মরণ দশা হয়। শুষ্ক মৌসুমে যেমন পানির অভাবে ব্যাহত হয় চাষাবাদ, আর বর্ষা মৌসুমে উজানের পানিতে নদীর তীরে বন্যা ও ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছেন নদী তীরবর্তী অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ।
তিস্তাপারের মানুষের দীর্ঘদিনের এ দুর্ভোগের শেষ হচ্ছে না। বিগত সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। এরপর চীনের রাষ্ট্রদূত তিস্তা এলাকা পরিদর্শন করেন। এতে তিস্তাপারের মানুষ আশায় বুক বাঁধে। কিন্তু তিস্তা মহাপরিকল্পনা চীন করবে নাকি ভারত করবে, এ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় তিস্তাপারের মানুষ হতাশ হয়েছেন। আগামী ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই- এই স্লোগানে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে জেলা বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। তিনি বলেন, আমাদের রংপুর অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী তিস্তা নদী। এ অঞ্চলে মানুষের একসময় গোলা ভরা ধান ছিল, গোয়াল ভরা গরু ছিল, মুখে ভাওয়াইয়া গান। তিস্তাপারের মানুষ একসময় আনন্দে দিন কাটাতেন। তিস্তা নদী ছিল আমাদের মায়ের মতো, সেই তিস্তা নদী এখন শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। তিস্তা নদী এখন ধু-ধু বালুচর।
তিনি বলেন, এর প্রধান কারণ হচ্ছে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণ করে পানি আটকে রাখে, আর বর্ষা মৌসুমে বিনা কারণে পানি ছেড়ে দেয়। এর ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়, লাখ লাখ পরিবারের বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যায়, নদীভাঙনের কবলে পড়ে মানুষ নিঃস্ব হয়ে বাড়িঘর ছাড়া হচ্ছে। তিস্তা এখন আমাদের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই তিস্তার সুষ্ঠু পানিবণ্টন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে দীর্ঘদিন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। কিন্তু বিগত সরকার তিস্তাপারের মানুষের সঙ্গে শুধু প্রতারণাই করেনি; পরিহাসও করেছে। আমরা মাঝেমাঝেই শুনি, তিস্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। আমরা এটিও জানি, আমাদের বন্ধু পার্শ্ববর্তী দেশ চীন এখানে অর্থায়ন করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। একটি স্মারকও স্বাক্ষরিতও হয়েছিল। কী কারণে তা আলোর মুখ দেখতে পায়নি, জানি না। আমরা যতটুকু জানি, সেই স্মারকের মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তাদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য আর জীবন-জীবিকা ফিরে পাবে, এই অঞ্চলের মানুষের কর্মচাঞ্চল্য তৈরি হবে কিন্তু তার কোনো কিছুই হয়নি। বর্তমানে তিস্তার দিকে তাকালে আমাদের সবার বুক হাহাকার করে। এখন পর্যন্ত কোনো সরকারই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তাই আমরা এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নদীর ন্যায্য পানিবণ্টন, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের লক্ষ্যে এই আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আর এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে তিস্তা তীরবর্তী পাঁচটি জেলার মানুষ। পাঁচটি জেলার মধ্যে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর ও নীলফামারী নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলে দুই দিনব্যাপী লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি থাকবে। দুলু আরও বলেন, আমি আহ্বান করি, লালমনিরহাটের ১৩০ কিলোমিটার নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের সাধারণ মানুষ নিজ নিজ উদ্যোগে এই লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করুক।