চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে করে চীনা পণ্যে শুল্কের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। এর মাঝেই ভারতের সঙ্গে একজোট হওয়ার বার্তা দিলেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তার মতে, গত বছর রাশিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের পর থেকে ভারত এবং চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতি হয়েছে। ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে এই দুই দেশকে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন ওয়াং।
আমেরিকার নাম উচ্চারণ না করলেও পরোক্ষভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই বার্তা দিয়েছেন তিনি। ওয়াং জানিয়েছেন, ক্ষমতার রাজনীতি এবং আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে হবে চীন এবং ভারতকে।
ভারত এবং চীনের শক্তির কথা বলতে গিয়ে ‘হাতি’ এবং ‘ড্রাগন’-এর উপমা ব্যবহার করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তার কথায়, “ড্রাগন এবং হাতির মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ড্রাগন আর হাতিকে একসঙ্গে নাচিয়ে দিতে হবে। একে অপরের বিরুদ্ধে কথা না বলে পরস্পরকে সাহায্য করতে হবে। তাতেই দুই দেশের ফায়দা। যদি এশিয়ার বৃহত্তম দুই অর্থনীতি একজোট হয়, সমগ্র বিশ্বের পক্ষেই তা লাভজনক।”
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় মেয়াদে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরেই চীনকে কড়া বার্তা দিয়েছেন। চীনের পণ্যের ওপর প্রথমে ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছিলেন তিনি। তারপর তা দ্বিগুণ করে দেন। বর্তমানে চীনা পণ্যে আমেরিকা ২০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক নেয়। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ভাল চোখে দেখেননি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
চীনের পক্ষ থেকেও কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত চীনা দূতাবাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছে, “আমেরিকা যদি যুদ্ধই চায়, তা শুল্কযুদ্ধ হোক, বাণিজ্যযুদ্ধ হোক কিংবা অন্য কোনও যুদ্ধ, আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে তৈরি আছি।”
পরে পেন্টাগন জানায়, “তারাও তৈরি আছে।”
আমেরিকা এবং চীনের মধ্যে এই বাক্যবিনিময়ের মাঝেই শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বার্ষিক সাংবাদিক সম্মেলন করেন বেইজিংয়ে। সেখানে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্ন উঠলে বন্ধুত্বের বার্তা দেন তিনি। জানান, গত এক বছরে ভারত এবং চীনের সম্পর্কের অনেক ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। আগামী দিনে এই দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করলে তার একাধিক ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।
চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। ১৯৬২- এর যুদ্ধ এবং ১৯৬৭-এর সীমান্ত সংঘর্ষের পর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) তুলনামূলক শান্ত ছিল। ২০১৭ সাল থেকে পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হতে শুরু করে। সে বছর ডোকলামে টানা ৭৩ দিন দু’দেশের বাহিনী পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল। পরে কূটনৈতিক পথে সমস্যার সমাধান হয়। এরপর ২০২০ সালে পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে রক্তাক্ত সংঘর্ষ হয় ভারতীয় সেনার সঙ্গে চীনা সেনাবাহিনীর। তারপরেও কূটনৈতিক এবং সামরিক স্তরে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে শান্তি ফিরেছে। এবার আমেরিকার সঙ্গে শুল্কযুদ্ধের মাঝে ভারতকে ঘনিষ্ঠতার বার্তা দিল চীন। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া টুডে, দ্য প্রিন্ট
বিডি প্রতিদিন/একেএ