অসুস্থ হলে আমরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া শুরু করি, কিন্তু সঠিক মাত্রায় বা সঠিক সময়ে ওষুধ খেতে আমাদের যত অনীহা। আবার কিছুদিন পর শরীর ভালো লাগতে থাকলে ওষুধ খাওয়া বাদ দিই। কেউ কেউ ব্যস্ততার কারণে নিয়মিত সময় মেনে ওষুধ খেতে পারেন না। এই অভ্যাসগুলো আমাদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হতে পারে। ওষুধের কাজ হলো শরীরে নির্দিষ্ট কাজ শেষ করে বের হয়ে যাওয়া। এর জন্য শরীরে ওষুধের নির্দিষ্ট মাত্রা বজায় রাখা জরুরি। সময়মতো না খেলে সেই মাত্রা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ওষুধ পুরোপুরি কাজ করতে পারে না, রোগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক যদি অসময়ে খাওয়া হয় বা মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখন জীবাণুতে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, ভবিষ্যতে আর ওই অ্যান্টিবায়োটিক আপনার শরীরে কাজ করবে না। ওষুধের মাত্রার অসামঞ্জস্য অনেক সময় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়, যেমন- মাথা ঘোরা, ডায়রিয়া, কিডনি বা লিভারের ক্ষতি। বিশেষ করে কোনো বেলায় ওষুধ খেতে ভুলে গেলে পরের বেলায় কেউ কেউ মিস করা ডোজ একসঙ্গে খেয়ে ফেলার চেষ্টা করেন। যা মোটেও ঠিক নয়। কয়েকবার ওষুধ খাওয়ার পর উপসর্গ কমতে শুরু করলে হঠাৎ ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া খুবই বিপজ্জনক। কারণ রোগ তখন পুরোপুরি সারেনি, জীবাণু আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে এবং ওষুধের কার্যকারিতাও কমে যেতে পারে। তাহলে করণীয় কী? ঝুঁকি এড়াতে কখনোই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। নিজের মতো করে ডোজ বাড়ানো বা কমানো যাবে না। ওষুধ খাওয়ার সময় খাবারের নিয়ম মেনে চলা, কিছু ওষুধ খালি পেটে আবার কিছু খাবারের পর খেতে হয়। এ সংক্রান্ত যাবতীয় নির্দেশাবলি চিকিৎসকের ব্যবস্থপত্রেই দেওয়া থাকে। কিছু ওষুধের ফল দেখাতে সময় লাগে, তাই ধৈর্য ধরে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ চালিয়ে যেতে হয়। বিশেষ করে দীর্ঘস্থায়ী ও নিয়মিত ব্যবহৃত ওষুধ- যেমন উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের ওষুধ হঠাৎ নিজের মতো বন্ধ করা বা মাত্রা পরিবর্তন করা মোটেও নিরাপদ নয়। রক্তচাপ বা সুগার ঠিক থাকায় ওষুধ বাদ দেওয়া যায়, এমন ধারণা ভুল। কোনো ডোজ মিস হয়ে গেলে দ্বিগুণ না করে, কী করবেন সে বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ওষুধ নির্ধারিত নিয়মে খাওয়া মানে কেবল রোগ সারানো নয়, এটি ভবিষ্যতে বড় বিপদ থেকে নিজেকে রক্ষা করারও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। মনে রাখবেন ওষুধের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা মানেই নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা।
-মো. নোমান পারভেজ, ডক্টর অব ফার্মেসি (ফার্ম-ডি), করাচি ইউনিভার্সিটি, স্বাস্থ্যনীতি বিশ্লেষক