রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গতকাল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফেব্রুয়ারিতেই সংসদ নির্বাচন হবে বৈঠকে আশ্বস্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা; জানিয়েছে বিএনপি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পর নির্বাচন দাবি করেছে জামায়াত। এনসিপি বলেছে আগে দিতে হবে গণপরিষদ নির্বাচন। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সাংবাদিকদের জানান, ফেব্রুয়ারিতেই হবে জাতীয় নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই আগামী জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। প্রধান উপদেষ্টাও বিএনপি নেতাদের সেই আশ্বাস দিয়েছেন। গতকাল রাতে বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে এ কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠকে আরও অংশ নেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেছি যে নির্বাচন সঠিক সময়ে হবে। এটা নিয়ে কোনো রকমের দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে না। সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটেছে, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতির ওপর হামলা হয়েছে, আমরা এ ব্যাপারে আমাদের মতামত পরিষ্কার জানিয়েছি। এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ হয়েছে। খুবই উদ্বেগজনক রাজনৈতিক পরিস্থিতি।’
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পর নির্বাচন : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়ন এবং তার ভিত্তিতে নির্বাচন হতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার ন্যূনতম সংস্কারের যে ওয়াদা, তা যেন আইনি ভিত্তির মাধ্যমে এখনই বাস্তবায়ন করা হয়। যদি তা না করা হয় তাহলে রক্ত দেওয়া, জীবন দেওয়ার অর্জন হবে শূন্য। গতকাল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদলের বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ডা. তাহের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তিনটি বিষয়ে জাতিকে আশ্বস্ত করেছিলেন। সংস্কার করবেন, বিচার দৃশ্যমান করবেন এবং বিশ্বমানের আনন্দঘন নির্বাচন উপহার দেবেন। কিন্তু এসব অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ আছে বলে আমরা তাঁকে জানিয়েছি। সংস্কার প্রশ্নে এক মাসের অধিক সময় আমরা ৩১টা দল ও সংস্কার কমিশন দীর্ঘ আলোচনা করে ঐকমত্যের জায়গায় আসার চেষ্টা করেছি। মূল এজেন্ডা ছিল ১৯টি। দু-একটি দল কোনো কোনো মেজর ইস্যুতে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। কিন্তু দুই-তৃতীয়াংশ দল সব বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছে। তিনি বলেন, অল্পসংখ্যক দল সংস্কারের মূল ১৯টা উদ্যোগ বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছে। তারা বলছেন, নির্বাচিত সরকার সংস্কার করবে। তাহলে এখন এই আলোচনার দরকার ছিল কী? জুলাই চার্টার যেটা হয়েছে তার তিনটি অংশ। প্রথমত, ঐকমত্যে পৌঁছা। দ্বিতীয়ত, আইনি ভিত্তি দেওয়া। তৃতীয়ত, এর বাস্তবায়ন। আমরা যেসব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছি, সেসবের আইনিভিত্তি দেওয়া ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দু-একটি দল বাধা দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বিচার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এক দিনে হবে না। তবে এটি অব্যাহত রাখতে হবে। তৃতীয়ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি এনসিপির : আগামী নির্বাচন গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজন করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল সন্ধ্যায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এনসিপি নেতারা এ আহ্বান জানান। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডাক্তার তাসনিম জারা, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ। বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মূলত পাঁচটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে, এখনো চূড়ান্ত হয়নি। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও সাংবিধানিক ভিত্তির জন্য আগামী নির্বাচনটা যেন গণপরিষদ নির্বাচন হয় সেটা আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি জানিয়েছি।
জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষিত সময় অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোট হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও আনন্দঘন পরিবেশে। প্রধান উপদেষ্টা সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন নিয়ে আবারও তার প্রতিশ্রুতি জানিয়েছেন। গতকাল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব এ কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কেউ যদি নির্বাচনের বিকল্প ভাবে সেটা হবে এ জাতির জন্য খুবই বিপজ্জনক। প্রেস সচিব বলেন, সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে দুর্গাপূজা। এ পূজা ঘিরে কোনো গোষ্ঠী যেন কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সজাগ থাকতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।