প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদের ইত্যাদি দর্শকহৃদয় জয় করে সেরার আসনটি দখল করেছে। শুরুতেই ছিল ঈদের গান, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে, এলো খুশির ঈদ’। এ গানটিতে অংশগ্রহণ করেছে দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গেয়েছেন উপস্থিত কয়েক হাজার দর্শক। এর পরেই ঈদের প্রধান পোশাক পাঞ্জাবির ওপর পরিবেশিত হলো চমৎকার একটি শিক্ষণীয় পর্ব। যেখানে একাল ও সেকালের পাঞ্জাবির বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। অনলাইনের এ যুগে অনলাইন নিয়ে চমৎকার তিনটি মিউজিক্যাল ড্রামা করা হয়। যেখানে অনলাইনের অপব্যবহারগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হয়। যা ছিল উপভোগ্য। এবারও হানিফ সংকেত দুজন জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পীকে সংগীতশিল্পী হিসেবে উপহার দিয়েছেন। গেয়েছেন টিভি তারকা জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি ও চলচ্চিত্র তারকা সিয়াম আহমেদ। দুজনই চমৎকার গেয়েছেন। মনে হয়েছে দুজনই পেশাদার শিল্পী। টেলিভিশনের জনপ্রিয় চারজন অভিনয় তারকা ও একদল নৃত্যশিল্পীর ত্রিমাত্রিক নৃত্যটি যেমন অসাধারণ ছিল তেমনি এর মিউজিক কম্পোজিশনও ছিল অপূর্ব। পরিবারের নিয়মিত সহকর্মী, কাজের লোক, গাড়িচালক, দারোয়ান এদের নিয়ে করা পর্বটিতে বকশিশ এবং জাকাত নিয়ে করা পর্বটি ছিল অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী। এই প্রথম হাবিব ওয়াহিদ ও প্রীতম হাসান গাইলেন একসঙ্গে। যা ছিল উপভোগ্য। ইউটিউবে অত্যন্ত জনপ্রিয় বাউল সংগীত ‘আমি পারি না আর পারি না, আমি কেন মরি না’-গানটির সঙ্গে সমসাময়িক বেশকটি সমস্যা-দ্রব্যমূল্য, যানজট, ঈদের বাজার এসব সমস্যাকে তুলে ধরা হয়েছে, যা সামাজিক অসংগতি তুলে ধরার পাশাপাশি একটি বার্তাও দিয়ে গেছে। চিত্রনায়িকা বুবলী ও অভিনেতা তৌসিফ মাহবুবের অংশগ্রহণে পরিবেশিত দলীয় সংগীতটিতে মানুষের বিবেকবোধ জাগ্রত করার আহ্বান জানিয়ে কটাক্ষ করে বলা হয়েছে- ‘হায়রে কপাল মন্দ, চোখ থাকিতে অন্ধ, দেখার চোখ খোলা থাকলেও বিবেকের চোখ বন্ধ’। বিদেশিদের নিয়ে করা দেশি পর্বে উঠে এসেছে সমকালীন সমস্যা গুজবের প্রসঙ্গ। বিদেশিদের ছোট একটি নাটিকার মাধ্যমে গুজবের খারাপ দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। দর্শক পর্বের শুরুতেই হানিফ সংকেত তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বললেন, ‘স্নেহ-শাসন-ভক্তি, সবকিছুর মূল শক্তি হইলো তৈল, অর্থাৎ চাটুকারিতার কার্যকারিতা সবারই জানা।’ চাটুকারিতা নিয়ে অভিনয় করেন অভিনেতা নাসিরউদ্দিন খান। সবশেষে ছিল সাবিনা ইয়াসমিন ও সৈয়দ আবদুল হাদীর সঙ্গে এ প্রজন্মের দশজন জনপ্রিয় শিল্পীর পরিবেশিত দেশের গান। এ দুই শিল্পী সম্পর্কে হানিফ সংকেত যথার্থই বলেছেন, ‘চিরদিনের শিল্পী’। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে শপিং গাইড, টাকার বহুরূপ, ঘুষ প্রদান পদ্ধতি ও রিপোর্টার পর্ব, ব্যবসায় সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্যসহ বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয়ে ছিল ১০/১২টি নাট্যাংশ। তবে চুরি নিয়ে প্রবাদ বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণ ছিল অসাধারণ। সমাজের ছোট-বড় অসংগতি তুলে ধরে হানিফ সংকেত ইত্যাদির মাধ্যমে যে সামাজিক আন্দোলন শুরু করেছেন তা দর্শকদের ভাবনার জগৎকে প্রভাবিত ও বিবেকবোধ জাগ্রত করে। ফলে মানুষ সচেতন হয়।